টেস্ট ক্রিকেটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে উদ্যোগ নিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। দীর্ঘদিন ধরে চলা আলোচনার পর এবার আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট ক্রিকেটকে দুটি স্তরে ভাগ করার লক্ষ্যে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে সংস্থাটি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই কমিটি তাদের সুপারিশ জমা দেবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৭ সাল থেকে চালু হতে পারে নতুন এই টেস্ট কাঠামো।
বর্তমানে আইসিসির পূর্ণ সদস্য ১২টি দেশ টেস্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ পায়, যার মধ্যে ৯টি দল অংশ নেয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে। তবে নিচের দিকের দলগুলোর পারফরম্যান্স ও জনপ্রিয়তা কম হওয়ায়, এই ম্যাচগুলো আর্থিকভাবে লাভজনক হয় না। এমন যুক্তি তুলে ধরেই টেস্ট ক্রিকেটকে দুই ভাগে ভাগ করার ভাবনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
এ প্রস্তাবের মূল উৎসধারায় রয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। তারা চায়, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইংল্যান্ড। এই তিন দল একে অপরের বিপক্ষে প্রতি তিন বছরে দুটি করে টেস্ট সিরিজ খেলুক, যা বর্তমানে হয় প্রতি চার বছরে। তবে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এখনো এই প্রস্তাবে পুরোপুরি সাড়া দেয়নি।
আইসিসির বার্ষিক সভায় এই প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় আসে। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত চার দিনের বৈঠকে আট সদস্যবিশিষ্ট একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে। কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইসিসির নতুন প্রধান নির্বাহী সংযোগ গুপ্ত। সদস্য হিসেবে আছেন সিএ প্রধান নির্বাহী টড গ্রিনবার্গ ও ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড।
এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হলে আইসিসির ১২টি পূর্ণ সদস্য দেশের মধ্যে কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ যেসব দল দ্বিতীয় স্তরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে, তাদের অনেককেই সম্মতি দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কোনো দেশই দীর্ঘ সময় অবনমনে থাকতে চাইবে না। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নিয়ম অনুযায়ী, দ্বিতীয় স্তর থেকে উত্তরণের জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে অন্তত দুই বছর।
তাছাড়া বড় দলগুলোর বিপক্ষে ম্যাচ থেকে যে আর্থিক লাভ হয়, তা থেকে বঞ্চিত হবে দ্বিতীয় স্তরের দলগুলো। এ কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর চিন্তাও করা হচ্ছে।
টেস্ট ক্রিকেটে পরিবর্তনের পাশাপাশি আইসিসির সভায় আলোচনা হয়েছে একটি নতুন টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ‘বিশ্ব ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ’ নিয়ে। যদিও এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব পেশ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ডের উদ্যোগে প্রথম চালু হয়েছিল টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নস লিগ। তবে সম্প্রচার স্বত্বজনিত জটিলতায় ২০১৪ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। এবার আইসিসি নিজস্ব উদ্যোগে নতুন একটি ক্লাব টুর্নামেন্ট চালুর চিন্তা করছে।
এছাড়া সভায় পূর্ব তিমুর ক্রিকেট ফেডারেশন ও জাম্বিয়া ক্রিকেট ইউনিয়নকে সহযোগী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের সংখ্যা দাঁড়াল ১১০টি।
বিডি প্রতিদিন/মুসা