টানা তিন দিনের কারফিউ আর ইন্টারনেটবিচ্ছিন্নতার পর কোটা সংস্কার থেকে স্বৈরাচার পতনের দিকে মোড় নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরূপ পরিস্থিতি দমনে অনেকটাই সফলতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ সরকার। গত বছর ২২ জুলাই এমনই এক পরিস্থিতিতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দম্ভোক্তি করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, শেখ হাসিনা চলে গেছে, শেখ হাসিনা নাই! এসব গুজব ছড়ানো হয়েছে। শেখ হাসিনা পালায় না।’ আন্দোলনে পুলিশের ওপর হামলা, স্থাপনা ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ সহিংসতার অভিযোগে তখন চলছিল পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান। নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় ২২ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। আন্দোলনকারী সন্দেহে গণগ্রেপ্তারের শিকার হন অনেক ছাত্র। দুষ্কৃতকারীদের দমনে চিরুনি অভিযানের অংশ হিসেবে গ্রেপ্তারের এ অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় পুলিশ।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে দেখতে গিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ওই দিন বলেন, ‘কারফিউ বিদ্যমান থাকার কারণে শাটডাউন কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া, আবাসিক হল খুলে দেওয়া, সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কারফিউ তুলে দিতে হবে।’ এর আগে ১৯ জুলাই রাতে নাহিদকে সাদা পোশাকের লোকজন নন্দীপাড়ার বন্ধুর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ২১ জুলাই ভোরে নাহিদ অসুস্থ অবস্থায় পূর্বাচলে পড়ে ছিলেন। জ্ঞান ফিরলে একাই তিনি বনশ্রীর বাসায় ফেরেন। সেখান থেকে তাঁকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নাহিদের দুই হাত, পা আর পিঠে ছিল নির্যাতনের চিহ্ন। ২২ জুলাই নাহিদ চিকিৎসা শেষ না করেই বাসায় ফিরে যান। একই দিন নিখোঁজ চার সমন্বয়কের খোঁজ পেতে সরকারের প্রতি ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর মধ্যে তাঁদের সন্ধান না মিললে পরদিন অফিস ও বাসাবাড়ির সামনে কালো কাপড় বেঁধে মৌন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তাঁরা। ওই দিনের খবরগুলো থেকে জানা যায়, আন্দোলনে নাশকতার মামলায় ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীসহ হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে আসামি করা হয়েছে। শুধু ২২ জুলাই ঢাকায় ৩৫০ জনকে কারাগারে আর ১১ জনকে রিমান্ডে পাঠান ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালত। এদিকে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ একাধিক কর্মসূচি পালন করবে রাজনৈতিক দলগুলো। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদান’ শীর্ষক কর্মসূচি পালন করবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্য ও গণপ্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করবে জামায়াতে ইসলামী।