এখনো অনেক শিক্ষার্থী নিখোঁজ। তাদের পরিবার রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করছে। হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে আদরের সন্তানের খোঁজে অভিভাবকরা ভিড় করছেন। সন্তানের খোঁজে দিশাহারা তাঁরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে যে কাউকেই জড়িয়ে ধরে সন্তানের খোঁজ জানতে চাচ্ছেন এবং এদিকওদিক ছোটাছুটি করছেন মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী জুনায়েদের বাবা। ‘কোথায় আমার জুনায়েদ? সকালে আমার ছেলেটা গরম ভাত খেয়ে বের হয়েছে। আপনারা কেউ দেখেছেন আমার মণিকে’, বলছেন জুনায়েদের বাবা। স্কুলের সামনে সন্তানের খোঁজে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন অনেক অভিভাবক। সন্তানের নাম ধরে উদ্ধারকারী সংস্থার কাছে তথ্য জানতে চান অনেকে। আহাজারি করে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছেন। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এক মা বিলাপ করে মেয়েকে খুঁজছেন আর বলছেন, ‘আমার মেয়ে কোথায়? আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিন।’ পারুল নামে এই অভিভাবক জানান, তাঁর মেয়ে নুসরাত আক্তার উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি জানান, মেয়ের ক্লাস শুরু হয় সকাল ৮টায়, শেষ হয় ১টায়। এরপর কোচিং চলে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। তাঁদের বাসাও দিয়াবাড়ীতে। স্কুলের পাশের মেট্রোরেল ডিপোতে সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।
রাজধানীর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে বিমান দুর্ঘটনায় আরিয়ান আশরাফ নাফিসের শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। আইসিইউর সামনে নাফিসের মা তাহমিনার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘একই স্কুলে আমার ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। ছেলে নাফিস দ্বিতীয় শ্রেণিতে আর মেয়ে তাহিয়া আশরাফ নাজিয়া পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। আমার ছেলে এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিংয়ে বোনকে আনতে গিয়েছিল। কিন্তু তার বোনকে আর খুঁজে পাচ্ছি না’ বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাহমিনা। নাজিয়ার মা বলেন, ‘কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজা হয়েছে, কিন্তু পাইনি। এখানে ছেলে ভর্তি। ৯০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে। জিজ্ঞেস করা হলে কেউ কেউ বলেছেন এখানে আনা হয়েছে। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না।’ নাজিয়ার মামা সুইট তাঁর ভাগনির সন্ধান চেয়েছেন। সন্তানকে খুঁজে পেতে গণমাধ্যমের সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রজ্জব আলী নিলয়কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তার মা নিলুফা বেগম। তাদের বাড়ি গাজীপুরে। ছেলের সন্ধানে আসা নিলুফা বেগমকে কলেজের ফটকের কাছে কাঁদতে দেখা যায়। তিনি ভিতরে যেতে চাইলে নিরাপত্তার কারণে ঢুকতে দেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নিলুফা বেগম বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনার পর থেকেই ছেলেকে ফোন দিয়ে আসছি, কিন্তু কল রিসিভ করছে না। ছেলের কী হয়েছে তা-ও জানতে পারছি না। ছেলের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। অন্তত ফোনটা রিসিভ করলে টেনশনমুক্ত হতাম।’মেয়ের খোঁজে আবদুল কাদের তাঁর ভাইসহ এসেছেন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। তাঁর মেয়ে আফিয়া তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার খোঁজ পাচ্ছেন না। তৃতীয় শ্রেণির সায়মা পড়ত বাংলা ভার্সনে। তার খোঁজে এসেছেন তার বাবার এক সহকর্মী।
একই অবস্থা অন্য স্বজনদেরও। কারও চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে, কেউ কাটিয়ে উঠতে পারছেন না সন্তান হারানোর শোক। কথা বলার ভাষাও হারিয়েছেন অনেকেই। সন্তান কিংবা আত্মীয়স্বজনদের জন্য দোয়াপ্রার্থনা করছেন সবাই।
নিখোঁজ স্কুল শিক্ষার্থীদের খবর পেতে জরুরি যোগাযোগের নম্বর
প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে নিখোঁজ স্কুল শিক্ষার্থীদের বিষয়ে জানতে জরুরি যোগাযোগের নম্বর দেওয়া হয়েছে। যাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগ করতে পারেন নিচের নম্বরগুলো-মিলিটারি রেসকিউ ব্রিগেড : ০১৭৬৯০২৪২০২, সিএমএইচ বার্ন ইউনিট : ০১৭৬৯০১৬০১৯, সিএমএইচ ইমারজেন্সি : ০১৭৬৯০১৩৩১১, মাইলস্টোন স্কুল অ্যাডমিন : ০১৮১৪৭৭৪১৩২?, ভাইস প্রিন্সিপ্যাল : ০১৭৭১১১১৭৬৬।