রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুলের ওপর বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আগুনে পোড়া ক্ষত নিয়ে শিক্ষার্থীদের দৌড়ে বেরিয়ে আসার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করতে ব্যস্ত ছিলেন কেউ কেউ। মুমূর্ষু শিশুদের উদ্ধারে যখন ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্টরা ব্যস্ত, তখন মোবাইল নিয়ে ঘটনাস্থল ঘিরে ছিল অতিউৎসাহীরা। গণমাধ্যমকর্মী না হয়েও লাইভ ভিডিও করেন অনেকে। বেগ পেতে হয় উদ্ধার কাজ চালাতে। অনেককে হাসপাতালে নিতেও সময় বেশি লাগে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অসংবেদনশীল ও অতিউৎসুক মানুষদের সামলাতে রাষ্ট্র নীতিমালা করলেও প্রতিটি নাগরিককে নিজেরই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। এটি শেখাতে পরিবার এবং শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখতে পারে। দুর্ঘটনার পর থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ির এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ২১ জুলাই রাত পর্যন্ত লোকারণ্য ছিল। কয়েকদিন ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে প্রবেশ ও বের হতে বেগ পেতে হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে গাড়ি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর তার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে কাজে বিঘ্ন ঘটায় অতি উৎসাহীরা।
এর আগেও দেশের বড় অগ্নিকা এবং দুর্ঘটনায় অতি উৎসাহীদের কারণে উদ্ধারকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে উদ্ধারকাজ। অতি উৎসাহীরা সহায়তা করার বদলে মোবাইলে ছবি-ভিডিও করতে ব্যস্ত থাকে। কেউ বা লাইভ করে ফেসবুকে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে এখন কোনো জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটলেই মানুষজনের উপস্থিতি বেড়ে যায়। বড় ধরনের দুর্ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার কারণে উদ্ধার কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। উৎসুক জনতার প্রতিবন্ধকতা বড় চ্যালেঞ্জ। বারবার বললেও তারা কথা শোনে না। এ মানুষগুলো উদ্ধারকাজ ব্যাহত করার পাশাপাশি নিজেদেরও ঝুঁকিতে ফেলেন। ২০২৩ সালে বঙ্গবাজার এবং গত বছর বেইলি রোডে অগ্নিকাে উদ্ধারকাজ ও আগুন নেভাতে গিয়ে উৎসুক জনতার কারণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে প্রবেশ ও বের হতে গিয়ে বাধায় পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভারনালবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন মানুষ-সৃষ্ট দুর্যোগের ঘটনাগুলোতে একজন অপরজনের ক্ষতির বিষয়টিকে এড়িয়ে যান।
নিজের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেন। সমাজ যখন পারস্পরিক সহানুভূতি, সহনশীলতা, সংহতি, বন্ধুত্ব- এমন প্রচলিত ব্যবস্থা থেকে অতিমাত্রায় আর্থিক লাভের দিকে ঝুঁকে পড়ে তখন অন্যের ক্ষতির বিষয়টি আর মানুষের মধ্যে কাজ করে না। মানুষ এখন ঝুঁকিপূর্ণ সমাজে বাস করছে। এই সমাজ অতিমাত্রায় যন্ত্র ও প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত। মানুষ ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এ কারণে মাইলস্টোন স্কুলের মতো ঘটনায় সহায়তার বদলে কিছু মানুষ ‘ডিজিটাল ভিউ’-এর আশায় মোবাইল নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামে।