পাড়ার মোড়ে মুদির দোকান দিয়ে চলত যার সংসার। হঠাৎ করেই তার সবকিছু বদলে যেতে থাকল। বাড়িতে উঠল দালান। এক দিন বাড়ির সামনে দেখা গেল চকচকে গাড়ি। এর মধ্যে চালচলনেও এসে গেছে আভিজাত্য। যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে গেছেন তিনি। নাম তার মোখলেসুর রহমান মুকুল। বাড়ি রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা। এখানে রয়েছে তার সাত তলা আলিশান আবাসিক ভবন। আছে দুটি দামি গাড়ি, অন্তত ৪০ বিঘা জমি। এর মধ্যে রাজশাহী শহরেই আছে অন্তত ২০ বিঘা জমি। যার আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকা। রাজশাহী এবং ঢাকায় রয়েছে তার চারটি বাড়ি। বুধবার কক্সবাজারের একটি হোটেল থেকে মুকুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সৌদি আরবেও রয়েছে মুকুলের হোটেল ব্যবসা। পেশায় তিনি আমদানি-রপ্তানিকারক ও ঠিাকাদার। তবে এলাকায় তিনি ‘হুন্ডি মুকুল’ নামে পরিচিত। অভিযোগ আছে, পবা ও গোদাগাড়ী এলাকার দুটি বালুঘাট কম মূল্যে পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওই গাড়িটি উপহার দিয়েছিলেন এমপি আসাদকে। সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুকুল রাজশাহী সিটি করপোরেশনে অন্তত ৪০০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়েছিলেন গত তিন বছরে। বিভিন্ন সূত্রমতে, সৌদি আরবেও রয়েছে মুকুলের হোটেল ব্যবসা। সেখানে মক্কা ও মদিনায় রয়েছে তার মালিকানাধীন দুটি আবাসিক হোটেল।
পুলিশ সূত্র জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট শাখা রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে গড়ে ওঠা হুন্ডি ও মাদক চোরাকারবারিদের একটি তালিকা করেছিল। ওই তালিকায় থাকা চোরাকারবারি ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বিতীয় নামটি ছিল এই মোখলেসুর রহমান মুকুলের। তার সঙ্গে ভারতের অন্যতম চোরাকারবারি এনামুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। একসময় ভারত সরকার নগদ টাকা ধরপাকড় শুরু করলে এনামুল ১ হাজার কোটি রুপি পাঠিয়ে ছিলেন রাজশাহীর এই মুকুলের কাছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অর্ধেক টাকা এনামুলকে ফেরত দেন মুকুল। বাকি ৫০০ কোটি রুপি আত্মসাতের অভিযোগ আছে মুকুলের বিরুদ্ধে।
এনামুলের লোকজন মুকুলকে খুঁজতে রাজশাহীতে আসেন কয়েকবার। সেই মুকুল এখন হাজার কোটি টাকার মালিক।