একসময় গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ কিংবা শহরের অলিগলিতে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল প্যাডেলচালিত রিকশা। ২০১৬ সালের দিকেও বগুড়া জেলাজুড়ে এর বেশ দাপট ছিল। সময়ের পরিবর্তন আর দিনবদলে আজ ঐতিহ্য হারাতে বসেছে প্যাডেলচালিত রিকশা। এতে দুর্দশায় পড়েছেন এর চালকরা। রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্যাডেলচালিত রিকশায় পরিশ্রম বেশি। সে তুলনায় আয় কম। বিপরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশায় পরিশ্রম কম হলেও আয় বেশি। সে কারণে অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় প্যাডেলচালিত রিকশা ছেড়ে চালকরা এখন ব্যাটারিচালিত রিকশায় ঝুঁকছেন। বর্তমানে বগুড়া শহরে ৫০-৬০টির মতো প্যাডেলচালিত রিকশা থাকলেও ব্যাটারিরিকশার ভিড়ে তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যে কটা প্যাডেলচালিত রিকশা চলছে সেগুলো চালাচ্ছেন বৃদ্ধরা। যাঁদের আয়েও পড়েছে ভাটা। টাকার অভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনতে না পারা ও চালাতে সাহস না পাওয়ায় তাঁরা প্যাডেলচালিত রিকশা চালাচ্ছেন।
প্যাডেলচালিত রিকশাচালক ৬৫ বছরের বৃদ্ধ ওমর আলী জানান, ১৯৮৮ সাল থেকে পায়ে টানা রিকশা চালিয়ে আসছেন। স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে সংসার। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছেন প্যাডেলচালিত রিকশাচালকরা। বগুড়া শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বেড়ে যাওয়ায় ভাড়া নেই বললেই চলে।’
শিবগঞ্জ উপজেলার বেলঘুচা গ্রামের রিকশাচালক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘২০ বছর যাবৎ প্যাডেলচালিত রিকশা চালাই। জীবনজীবিকার তাগিদে রিকশা চালাতে প্রতিদিন শহরে আসি। ২০১৬ সালের দিকেও শহরে প্যাডেলচালিত রিকশার দাপট ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর অস্তিত্ব বিলীনের পথে। যেখানে ৫০ টাকা ভাড়া সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশা ৩০ টাকায় হুহু করে নিয়ে যায়। আমরা চেয়ে থাকি। আগে যেখানে দিনে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা উপার্জন ছিল, এখন তা অর্ধেকেরও কম। অভাবের সংসারে ব্যাটারিচালিত রিকশা কেনার সামর্থ্য না থাকায় প্যাডেলের রিকশা-ই ভরসা।’
বগুড়ার ব্যবসায়ী আরমান হোসেন বলেন, ‘শহরে প্যাডেলচালিত রিকশা এখন খুবই কম চোখে পড়ে। মানুষ সময় বাঁচাতে ব্যাটারিচালিত রিকশায় বেশি যাতায়াত করে। তবে সময় বাঁচলেও ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।’