ইতালিতে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে ইউরোপের দেশটিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় অবরুদ্ধ এ দেশটিতে আরও ১৮৯ জনের প্রাণ নিয়েছে করোনাভাইরাস। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০১৬ জনে।
ইতালির বেসামরিক সুরক্ষা বিভাগ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, একদিনে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে দুই হাজার ৬৫১ জন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১১৩ জনে।
ইতালিতে একদিনেই নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৫১ জন। দেশটিতে বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১৫ হাজার ১৩ জন, চীনের পর যা সর্বোচ্চ।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী গিসেপে কন্তে লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পুরো দেশজুড়েই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর আগে দেশটির ১৪টি প্রদেশে ৮ মার্চ থেকে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে দেশটির ২০টি প্রদেশের সবগুলোতেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ইতালির প্রায় ছয় কোটি মানুষ। থমকে গেছে গোটা ইতালি। এরই মধ্যে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে গুরুতর অভিযোগ এল। দেশটির সরকার বলছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে মেডিকেল কিটের সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য ইউরোপীয় ইউনয়নভুক্ত দেশগুলোর কাছে জরুরিভিত্তিতে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু দেশগুলোর কাছ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। খবর সিজিটিএন।
ইইউতে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত মৌরিজিও মাসারি পলিটিকোর ওয়েবসাইটকে জানান, ইউরোপের দেশগুলো সাহায্য না করলেও তাৎক্ষণিক সাড়া দিয়েছে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চীন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর কোনও সাড়া না পেয়ে এটিকে পরস্পরের মধ্যে ‘সৌহার্দ্যের অন্তরায়’ বলে মন্তব্য করেন।
তিনি অনুরোধ জানান, করোনাভাইরাস মোকাবিলয়া আমাদের অবশ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিতের পাশাপাশি এ অঞ্চলে দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
এদিকে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জরুরি বার্তা পেয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুত সাহায্য পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ইতালিতে ২০ লাখ ফেস মাস্ক, ১০ হাজার লাং ভেন্টিলেটর, ২০ হাজার প্রতিরোধমূলক সুইটস এবং ৫০ হাজার টেস্ট কিটস পাঠানোর ঘোষণা দেন।
একই সঙ্গে চীন করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে ইতালির চিকিৎসকদের সাহায্যে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একটি মেডিকেল টিম পাঠানোরও ঘোষণা দেন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী চলা ‘ই-সামিট’ শেষে ইইউ নেতারা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ২৫ বিলিয়ন ইউরোর একটি তহবিল গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু কীভাবে তা সমন্বয় ও ব্যবহার করা হবে— সে বিষয়ে একমত হতে ব্যর্থ হন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা মনে করেন, ৭০ শতাংশ ইউরোপিয়ান কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন।
বিডি প্রতিদিন/কালাম