বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে জেলায় শুরু হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির প্রথম দিনেই অচল হয়ে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলা বন্দরসহ পুরো বাগেরহাট জেলা।
বিএনপি-জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা এই হরতালের কারণে বাগেরহাট হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দূরপাল্লার ও আন্তজেলার সব রুটে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়ক পথে মোংলা বন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনও বন্ধ হয়ে গেছে।
হরতালকারীরা সকালে জেলা নির্বাচন অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি। জেলার সব উপজেলা ও পৌর শহরে হরতাল পালন হচ্ছে। শহরের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি অফিসের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও মোরেলগঞ্জের পানগুছি ও মোংলা নদীতে ফেরি চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
জেলার সড়ক-মহাসড়কের অন্তত ৩০টি স্থানে পিকেটাররা টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার ফলে মোংলা বন্দরসহ পুরো বাগেরহাট সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও অপ্রতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
হরতালের প্রথম দিনে বাগেরহাট শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, দশানী মোড়, খানজাহান আলী (রহ.) মাজার মোড়, কাটাখালী মোড়, নোয়াপাড়া মোড়, ফরিহাট বিশ্বরোড মোড়, মোল্লাহাট সেতু মোড়, ফয়লাহাট মোড়, সাইনবোর্ড মোড়, মোরেলগঞ্জ ফেরিঘাট, রায়েন্দা পাঁচরাস্তা মোড়, মোংলা ইপিজেড-শিল্পাঞ্চল, মুনিগঞ্জ সেতু, দড়াটানা সেতু টোল প্লাজা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা সকাল থেকে পিকেটিংয়ে অংশ নেন।
পিকেটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাবেক এমপি শেখ মুজিবর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাফ্ফর রহমান আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ কামরুল ইসলাম গোরা, জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, নায়েবে আমীর অ্যাড. শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ মুহাম্মদ ইউনুস, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার শেখ জাকির হোসেন, অহিদুল ইসলাম পল্টু, খান মনিরুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি শেখ শাহেদ আলী রবি, যুবদলের সাবেক সভাপতি ফকির তারিকুল ইসলাম, সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসির আহমেদ মালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ আসাফুদৌলা জুয়েলসহ আরও অনেকে।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের একটি সংসদীয় আসন কমিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে। ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, মোংলা বন্দর, ইপিজেড-শিল্পাঞ্চল ও দুটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটসহ ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় চারটি আসন বহাল রাখা জরুরি।
জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, এটি কোনও দলীয় আন্দোলন নয়, এটি জনস্বার্থের আন্দোলন। নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে আসন কমানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে, নইলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কারিগরি কমিটি বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটিতে রাখার খসড়া প্রস্তাব দেয়। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও গত ৪ সেপ্টেম্বর ইসি চূড়ান্ত গেজেটে বাগেরহাটে তিনটি আসন বহাল রেখে নতুন সীমানা নির্ধারণ করে। এর প্রতিবাদে জেলায় তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ