রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগে এক দিনের ব্যবধানে দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। ৭৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ শনিবার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুর পরই তার মিরপুরের বাসভবন ও আশপাশ এলাকা লকডাউন করে দেওয়া হয়। তবুও রবিবার একই এলাকার আরেক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে, যিনি আগের দিন ওই এলাকায় করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া বৃদ্ধের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।
মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির আবাসস্থল মিরপুর উত্তর টোলারবাগে জনমনে এখন এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ওই ব্যক্তি আক্রান্ত অবস্থাতেই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোয়, স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন যে, এই ভাইরাস ইতোমধ্যে আশেপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুর টোলারবাগের এক বাসিন্দা বলেন, 'করোনাভাইরাসের ভয়ে আমরা এমনিতেই কম বের হতাম। কিন্তু এই মৃত্যুর কারণে পুরো এলাকাই মনে হচ্ছে যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে তেমন লোকজন নেই। সবাই এক ধরণের গৃহবন্দি। বাড়ির কাজের লোকদেরও আসতে মানা করা হয়েছে। আমাদের ধারণা ওই ব্যক্তির মাধ্যমে এই ভাইরাস হয়তো অনেকটাই ছড়িয়ে পড়েছে।"
তবে গণমাধ্যমে নয়তলা ওই ভবনটি লকডাউন করার যে খবর প্রচার করা হচ্ছে সেটির ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন মিরপুরের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ।
তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারকে ওই ভবনে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে ভবনের বাকি সদস্যদের সতর্কতার সাথে চলাফেরার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে ফ্ল্যাট মালিকরা পুলিশ, আইইডিসিআর ও সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনায় ভেতরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাছ করছে বলে জানান মোস্তাক আহমেদ। তিনি আরও বলেন, "করোনায় আক্রান্ত রোগীর পরিবারকেই শুধু কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আর অফিশিয়ালি কোনো ভবন লকডাউন করা হয়নি। ভবনের বাসিন্দারা তাদের নিরাপত্তার জন্যই চলাচল সীমিত করেছেন। আমরা বলছি তারা যেন মাস্ক পরে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে বের হন," তিনি বলেন।
আক্রান্ত ব্যক্তি মিরপুরে যে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন, সেখানকার চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
ইতোমধ্যে একজন চিকিৎসক কোয়ারেন্টাইনে আছেন বলে জানা গেছে।
হাসপাতালের কর্মকর্তারা সম্মিলিতভাবে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে মুখ খোলেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, "যখন পরীক্ষায় জানা যায় যে ওই রোগী করোনা পজিটিভ তখন তো পুরা হাসপাতালেই একটা উদ্বেগজনক অবস্থা। এজন্য আমরা সম্মিলিতভাবে কর্মবিরতিতে গেছি। আমি তো এখনও জানি না, আমি বা আমার সহকর্মীদের কেউ সংক্রমিত হয়েছেন কিনা। তো স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে আছি।"
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, বর্তমানে তারা ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করে সংক্রমণের কারণ জানার চেষ্টা করছেন।
তিনি আরও বলেন, "আমরা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলার আগে আরেকটু সময় নেব, কারণ আমরা সংক্রমণের উৎস খুঁজতে কাজ করে যাচ্ছি। ওই এলাকায় দু'জন প্রবাসী ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা দেখতে চাই যে তারা আক্রান্ত কিনা বা তাদের থেকে সংক্রমণ হয়েছে কিনা।"
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম