বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর বিষয়টি এখন আলোচনার শীর্ষে। তাছাড়া পুরাতন ভাইরাসও নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে ফিরে আসছে। ফলে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার বিষয়টি সামনে আসে।
এমন অবস্থায়ও দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলো জনস্বাস্থ্য রোগতত্ত্ববিদ নিয়োগে অবহেলা দেখাচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ‘সিটি কর্পোরেশনের সাংগঠনিক অবকাঠামোতে জনস্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ববিদ’ পদ সৃজনে ২০২০ সালের ৪ আগস্ট বললেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)সহ কোনো কর্পোরেশন পদ সৃজনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়নি।
চসিক সূত্রে জানা যায়, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গত বছরের ৭ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ- প্রিভেনশন (ইউএস সিডিসি) ভিডিও কনফারেন্সের গৃহীত সুপারিশ মতে দেশের প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনে পাবলিক হেলথ এপিডেমাইলোজিস্ট প্রোগ্রাম ফর অল সিটি কর্পোরেশন হেলথ সিস্টেম ২০২০-২০২১ এ কোভিড রেসপন্স প্রজেক্ট অব ইউএস সিডিসি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে সম্মতি জ্ঞাপন করা হয়।
এ প্রোগ্রামের আওতায় ইউএসসিডিসি’র উদ্যোগে এক বছরের জন্য প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশনে একজন করে জনস্বাস্থ্য রোগতত্ত্ববিদ নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে গত ৪ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ‘সিটি কর্পোরেশনের সাংগঠনিক কাঠামোতে জনস্বাস্থ্য রোগতত্ত্ববিদ পদ সৃজন’ এর প্রস্তাব শীর্ষক চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু প্রায় সাত মাস হলেও সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠায়নি।
চসিকের মেয়র মো. রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে করোনাভাইরাসসহ নানা রোগ-বালাই দেখা দিচ্ছে। এসব নিয়ে কাজ করার জন্য একজন জনস্বাস্থ্য রোগতত্ত্ববিদ থাকা উচিত। বিষয়টি নিয়ে আমি অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এটি জনস্বার্থ সম্পৃক্ত বিষয় হওয়ায় অবহেলার করার কোনো সুযোগ নেই।
জানা যায়, জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করে দেখেছেন, মানুষের মধ্যে প্রতি ১০টি সংক্রামক ব্যাধির মধ্যে ৬টির বেশি রোগ প্রাণীর কাছ থেকে ছড়াচ্ছে। আর প্রতি ৪টি নতুন সংক্রামক রোগের মধ্যে ৩টিই প্রাণীবাহিত। যেসব রোগ প্রাণীর কাছ থেকে মানুষের কাছে ছড়াচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে নিপাহ, তড়কা (অ্যানথ্রাক্স), এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, মার্স করোনা ভাইরাস, প্যানডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা, জলাতঙ্ক (র্যাবিস), লেপ্টোস্পাইরোসিস, ইবোলা, মারবার্গ প্রভৃতি। কীটপতঙ্গবাহিত রোগের মধ্যে আছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, পীতজ্বর (ইয়েলো ফিভার), ওয়েস্ট নাইল ফিভার প্রভৃতি।
দেশে এই রোগগুলোর বেশ কয়েকটির উপস্থিতি রয়েছে। পুরনো যেসব রোগ বাংলাদেশ বা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে একেবারেই কমে গিয়েছিল, যা আবার নতুন করে দেখা দিচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে কলেরা, ম্যালেরিয়া প্লেগ। ফলে দেশে সংক্রামক রোগ বাড়ছে। তাছাড়া আগে যে রোগ বয়স্কদের হতো, এখন সেটা তরুণ-যুবকদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। ফলে সময়ের বাস্তবতায় জনস্বাস্থ্য রোগতত্ত্ববিদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর