বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বগুড়ায় বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প

মাটির পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত কুমার -বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘দিন দিন কমে যাচ্ছে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের কদর। দেশি শিল্পের প্রতি অবহেলা আর সহ্য হয় না। অথচ মাটিই সব। এই মাটিই মানব সভ্যতা।’ কথাগুলো বগুড়া ধুনট উপজেলার মৃৎ শিল্প কারিগরদের।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বগুড়ার ধুনট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন পণ্যের ভিড়ে কমেছে এ শিল্পের কদর। অসহায় হয়ে পড়েছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শতাধিক ব্যক্তি ও তাদের পরিবার। এক সময়ে কুমাররা মাটির তৈরি পণ্যের ভার কাঁধে নিয়ে ছুটে চলত গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায়। এ সময় সামগ্রীর বিনিময়ে তারা ধান-চাল সংগ্রহ করতো। আবার নগদ টাকায়ও বিক্রি করতেন। এভাবেই সংসার চলতো মৃৎ শিল্পীদের। এখন তাদের অনেকেরই শোচনীয় অবস্থা। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। কুমারপাড়ার চাকা এখন আর আগের মতো ঘোরে না। ধুনট সদর ইউনিয়নের বিলকাজুলী গ্রামের মৃৎশিল্পী মাখন পাল জানান, এক সময় নিজেদের এলাকার জমি থেকে মাটি এনে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন অনেক দূর থেকে মাটি কিনে এনে পণ্য বানাতে হয়। মাটির দামও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। প্রতি ভটভটি মাটির দাম এক হাজার টাকা। আবার মাটি মাড়াইয়ের জন্য ৪০০ টাকা দিতে হয়। এতো খরচ করে বাজারে পণ্য বিক্রি করতে গেলে ক্রেতারা দাম দিতে চান না। ক্রেতারা যে দাম হাঁকেন সে দামে বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হয়। ধুনট উপজেলার পৌচিবাড়ি গ্রামের লিপি পাল বলেন, বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, সিলভার, এমনকি লোহার তৈরি সামগ্রীর কারণে মাটির জিনিসপত্রের তেমন কদর নেই। তাই এই ব্যবসায় এখন আর সংসার চলে না। যা আয় হয় তা দিয়ে টেনেটুটে সংসার চালাতে হয়। আয় না থাকলেও বাপ-ঠাকুরদার পেশা ছাড়তে পারছি না। তাই এ শিল্প নিয়েই পড়ে আছি। বগুড়ার ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, মৃৎশিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন শো-পিস, হাঁড়ি, পাতিল, কলসি, টাইলসসহ দৃষ্টিনন্দন সামগ্রী রফতানি করা গেলে এই পেশায় জড়িতদের জীবনে সচ্ছলতা আসবে। এ পেশায় জড়িতরা মৃৎ শিল্পের উন্নয়নে কোনো সহায়তা চাইলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

সর্বশেষ খবর