শিরোনাম
রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ফরিদপুরে ইটের সংকট

কয়লার দাম বাড়ায় ভাটা মালিকরা উৎপাদনে যেতে পারেননি

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

ফরিদপুরে ইটের সংকট

ফরিদপুরে চলতি মৌসুমে এখনো ইট উৎপাদনে যেতে পারেননি ভাটার মালিকরা। কয়লা সংকট ও দ্বিগুণের বেশি মূল্যবৃদ্ধির কারণে জেলায় দেখা দিয়েছে ইটের সংকট। জানা গেছে, গত বছর প্রতি টন কয়লার দাম ছিল ৮ হাজার ৫০০ থেকে ৯ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে তা ১৯ থেকে ২২ হাজার টাকা। এ কারণে ভাটা মালিকরা ইট কাটা বন্ধ রেখেছেন। ফরিদপুর সদরসহ নয় উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১২০টি ইটভাটা সচল রয়েছে। তার মধ্যে অটো ইটভাটা সাতটি বাকি ১১৩টি ইটভাটা কয়লানির্ভর। ফরিদপুর সদর ও আশপাশের বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে জানা যায়, গত বছরের ইট এরই মধ্যে বিক্রি প্রায় শেষ। কিন্তু নতুন বছর উৎপাদনে না যাওয়ায় জেলাজুড়ে ইটের বেশ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি উন্নয়ন কাজে ঠিকাদাররা ইট কিনে কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। নতুন ইট যে দামে বিক্রি হবে তা বর্তমান বাজারদরের দ্বিগুণ। ভাটাসংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত ইট উৎপাদনে যাওয়ার সময় সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিই মাটি কেনা, মাটি থেকে কাঁচা ইট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। কাঁচা ইট রোদে শুকিয়ে অক্টোবরে প্রথম কিস্তি পোড়ানো শুরু হয়। কিন্তু এবার নভেম্বর শুরুর পরও ইট উৎপাদন শুরু করা যায়নি। ভাটা মালিকদের ভাষ্য, গত বছর ১ টন কয়লার দাম ছিল সাড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। অথচ কয়েক মাসের ব্যবধানে এখন ১৯ থেকে ২২ হাজার টাকা ১ টন কয়লার দাম। তা-ও প্রয়োজন অনুযায়ী পাওয়া যায় কি না ঠিক নেই। আলফাডাঙ্গা উপজেলার ইটভাটা মালিক আবুল হোসেন বলেন, ‘এক মৌসুমে আট রাউন্ডে ৭-৮ লাখ করে মোট ৫০-৬০ লাখ ইট তৈরি হয়। একেক রাউন্ডে ইট পোড়াতে লাগে ২০-২৫ দিন। এবার কয়লার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আবার চলতি মৌসুমের প্রায় দেড় মাস চলে গেছে। দাম না কমা পর্যন্ত কেউ ভাটা চালু করবেন বলে মনে হচ্ছে না। সব মিলিয়ে এবার ইট উৎপাদনে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’ কানাইপুরের ভাটা মালিক ও বোয়ালমারীর শেখপুর এলাকার ভাটার মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি রাউন্ডে ৭-৮ লাখ ইট পোড়ানো হয়। এতে প্রায় ১৩০ টন কয়লা লাগে। এতে আট রাউন্ড পোড়ালে ১ হাজার টনের বেশি কয়লা প্রয়োজন হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘১ হাজার টন কয়লার দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা। এ কয়লা এবার কিনতে লাগবে সোয়া ২ কোটি টাকা। আবার টাকা হলেই কয়লা মিলছে না। সময়মতো সাপ্লাই পাওয়া যাচ্ছে না।’ মধুখালী উপজেলার ভাটার মালিক খন্দকার মোরশেদ রহমান বলেন, ‘বেশি দামে কয়লা কিনে একটি ইট পোড়াতে ১০ থেকে ১১ টাকা খরচ হবে। সে অনুযায়ী ১ হাজার নতুন ইটের দাম হবে ১৩-১৪ হাজার টাকা। এত দাম দিয়ে মানুষ ইট কিনবে কি না চিন্তার বিষয়।’ শহরতলির ভাটা মালিক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইটভাটা ব্যবসা করতে হলে বিভিন্ন জেলার ইট প্রস্তুতকারী শ্রমিকদের সারা বছর অথবা কমপক্ষে ছয় মাস আগে ২৫-৩০ লাখ টাকা দাদন হিসেবে অগ্রিম দিতে হয়। তা না হলে সময়মতো শ্রমিক পাওয়া যায় না। অন্য ভাটায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে পড়েন। কারণ ইটভাটা শ্রমিকের সংখ্যা কম, চাহিদা বেশি। এবার চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকরা কাজে আসতে পারছেন না। বেকার অবস্থায় কাটছে তাদের সময়। প্রতিটি ভাটায় ৮০ থেকে ১০০ জন শ্রমিক অপেক্ষারত।’             ফরিদপুর ভাটার মালিক খলিফা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘২২ হাজার টাকায় কয়লা কেনা ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন মালিকরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখনই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর