রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নৌকা ডোবাতে সক্রিয় বিদ্রোহীরা

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

নৌকা ডোবাতে সক্রিয় বিদ্রোহীরা

মুন্সীগঞ্জে বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপে কোণঠাসা আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা। তৃতীয় দফার ইউপি নির্বাচনে জেলায় ২০টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ নভেম্বর। এবারের নির্বাচনে বিএনপি বা জাতীয় পার্টির তেমন কোনো প্রার্থী না থাকলেও লড়াইটা জমে উঠেছে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। ইতিমধ্যে সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি, চরকেওয়ার ও বাংলাবাজারের নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা হামলায় বাড়িঘর ভাঙচুর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ককটেল বিস্ফোরণ এবং মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ প্রায় শতাধিক কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। পাশাপাশি নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলাসহ প্রচার-প্রচারণায় পাল্টাপাল্টি বাধা দেওয়ার অভিযোগ তো রয়েছে। এতে করে যতই ভোট গ্রহণের সময় এগিয়ে আসছে ততই উৎকণ্ঠা বাড়ছে।  আগামী ২৮ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ  সদরে ৯টি ও পার্শ্ববর্তী টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ১১টিসহ ২০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সবকটি ইউনিয়নে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পুরোদমে চলছে প্রচার-প্রচারণা। কিন্তু এ তালিকায় আওয়ামী লীগের বর্তমান কয়েকজন চেয়ারম্যানের ঠাঁই হয়নি। গত ইউপি নির্বাচনে এসব ইউনিয়নের মধ্যে সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিন, বিদ্রোহী দুই, বিএনপির একজন ও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ৯টি ইউনিয়নে মধ্যে ছয়জন চেয়ারম্যান প্রার্থী এবারও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। বাকিরা দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছেন পুরোদমে। জানা গেছে, সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান জীবন গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি প্রার্থী হতে আবেদন করেছিলেন কিন্তু তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাই দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নৌকবিরোধী কর্মকান্ডে  ব্যস্ত রয়েছেন। ওই ইউপিতে মনোনয়ন পেয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া। আক্তারুজ্জামান দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হলেও নিজ দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও আধারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সামছুল কবির মাস্টারের এবারও নৌকায় ঠাঁই হয়নি। ওই ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সামছুল কবির দুবার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করলেও তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহসীনা হক কল্পনাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এদিকে শিলই ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হাসেম লিটনকে এবারও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। একই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন লড়াইয়ে মাঠে নেমেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মৃধাসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। এ ছাড়া বাংলাবাজার ইউনিয়নে দ্বিতীয়বারের মতো নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন পীর। এ ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন নান্নু। মোল্লাকান্দিতে নৌকার প্রার্থী রিপন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন গত নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া ও বহিষ্কৃত মহাসিন হক কল্পনা। মহাখালী ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভপতি শহিদুল ইসলাম। কিন্তু ওই ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তিন আওয়ামী লীগ নেতা। তারা হলেন- সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ রিপন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য জিয়াউল হাসান বিরীন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সদস্য মনির হোসেন সাগর। এ ছাড়া পঞ্চসারে বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বিগত ইউপি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। এবারও তিনি নৌকার বিরুদ্ধে তার অবস্থান শক্ত করে প্রার্থী হয়েছেন। এ ইউনিয়নে নৌকার দলীয় প্রার্থী হযেছেন মো. আলমগীর হোসেন খান ও বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর আড়াল থেকে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের একাংশ বড় পদধারী নেতা-কর্মীরা পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের। তারা বলেন, একটি মহল বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে মাঠ গরম করছে নৌকার প্রার্থীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করার জন্য। এ ছাড়া নৌকা প্রার্থীদের পরাজিত করতে পাঁয়তারও চালাচ্ছেন। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর নৌকা বাঁচাতে এখনই তাদের লাগাম টেনে ধরা উচিত বলে মনে করেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সামছুল কবির মাস্টার বলেন, আমি দলীয় প্রার্থী হতে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু দেওয়া হয়নি। মানুষের ভালোবাসায় গতবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছি। এবারও নির্বাচিত হবেন বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি ও চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বলেন, এবার আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের সিদ্ধান্তকে সম্মান দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব। বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শেখ লুৎফর রহমান বলেন, নৌকার বিপক্ষে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা অস্থান করছেন তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রে থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী ও পৃষ্ঠপোষকরা তাদের অবস্থান থেকে সরে না এলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাদের দল থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে।

সর্বশেষ খবর