বুধবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

পঞ্চাশ বছরেও সেতুটি হয়নি

হিলি প্রতিনিধি

পঞ্চাশ বছরেও সেতুটি হয়নি

নদীটির নাম তুলসীগঙ্গা। দিনাজপুরের হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে ছোট এই নদীটি। দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও এই নদীতে একটি সেতু নির্মাণ হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে ওই অঞ্চলের ১৫টি গ্রামের ৩০ হাজার লোক চলাচলের জন্য নিজেরাই তৈরি করেছেন কাঠের ২০০ ফিট সেতু। স্থানীয়দের অভিযোগ, দেশ স্বাধীনের পর থেকে অনেক এমপি, উপজেলা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজলোর বাঁশমুড়ি বাজার থেকে আধাপাকা একটি সড়ক কাঠের সেতুর পশ্চিম পাশে গিয়ে ঠেকেছে। অনেকটা জীর্ণ শরীরে ভাঙনের ক্ষত নিয়ে বীর দর্পে দাঁড়িয়ে আছে স্থানীয়দের নির্মাণ করা ২০০ মিটার কাঠের সেতুটি। নদীতে পানি না থাকায় স্থানীয়রা এর নিচ দিয়ে যাতায়াত করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাকিমপুর উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে তুলসীগঙ্গার কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে আলীহাট ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে এই নদীটি। পশ্চিম পাশে হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের বাঁশমুড়ি ও পূর্বপাশে ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগি বাজার এবং দক্ষিণে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলা। স্থানীয়রা জানান, ‘ওই এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সেতুটি ব্যবহার করেন। হিলি বাজারে আসতে গেলে কয়েক মিটারের রাস্তার জন্য প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে যেতে হয়। অনেকটাই জনপ্রতিনিধিদের ওপর অভিমান করে ২০০ ফুট একটি কাঠের সেতু তৈরি করে স্থানীয়রা।’ তাদের দাবি, ‘প্রতিশ্রুতি মিলেছে বহুবার কিন্তু দিন মাস পেরিয়ে বছর যায় সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয় না। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও তুলসীগঙ্গা নদীর ওপরে হয়নি সেই কাক্সিক্ষত সেতু। এবার প্রতিশ্রুতি নয়; দ্রুত একটি সেতু বাস্তবায়নের দাবি।’ স্থানীয় আনোয়ার হোসেন নামের এক পথচারী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই এই নদীর ওপর সেতু বানিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। সময়ে সময়ে নির্বাচন এলেই স্থানীয় নেতারা সেতুটি তৈরি করার ফুলঝুরি দেন। কিন্তু নির্বাচনের পর আবারও নির্বাচন আসে, সেতু হয় না। সরকার মানুষের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে, রাস্তা করে দিচ্ছে অথচ আমাদের সেতু করে দেয় না।’ পথচারী এহসান উল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘ পথ ঘুরে আমাদের হিলি এলাকায় যেতে হয়। এতে সময় নষ্ঠ হয়। বর্ষার সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে সেতুর ওপর দিয়ে সন্তানদের নিয়ে পারাপার হতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দারি আমাদের একটি সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য।’ কথা হয় ট্রাকচালক সগির আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে আমাদের গাড়ি নিয়ে পাশের গ্রামে যেতে প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে যেতে হয়। এ ছাড়াও শুকনো মৌসুমে নদীর নিচ দিয়ে চলাচল করার সময় অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। একটি সেতু হলেই আমাদের কষ্ট লাঘব হবে।’ স্থানীয় বাজারের ষাটোর্ধ্ব  মালেক মিয়া জানান, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই এই নদীর ওপর সেতু হবে-হচ্ছে বলে আশায় বুক বেঁধে আছি। সেতুর অভাবে মানুষজন অনেক কষ্ট করে নদী পার হয়। অনেক সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। মাঝে-মধ্যে যখন এই সাঁকো ভেঙে পড়ে তখন মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে অনতিবিলম্বে একটি সেতু করা প্রয়োজন।’ উপজেলার আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। আমার নির্বাচনের সময় এটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এলাকাবাসীর দুঃখ লাঘবে সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করছি। দ্রুত এটি বাস্তবায়ন করা হবে- এমনটাই আশা করছি।’ হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, ‘আমাদের হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের তুলসীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সেতুটি নির্মাণের জন্য আশ্বস্ত করেছেন। এরই মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া রয়েছে। আশা করছি শিগগিরই নির্মাণ হবে।’

সর্বশেষ খবর