মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

জেলা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে বিভক্ত নেতা-কর্মীরা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

জেলা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে বিভক্ত নেতা-কর্মীরা

মামলা, হামলা ও দীর্ঘদিন সরকারে না থাকায় বগুড়া জেলা বিএনপির এমনিতেই নাজুক অবস্থা। এরই মধ্যে জেলা বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিভক্ত হয়ে পড়ায় জেলা বিএনপির শক্তিও খর্ব হয়ে নানা সংকটের সৃষ্টি করছে। কে হচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক তা নিয়ে দলের ভিতরে চলছে নানা কানাঘুষা। কানাঘুষা থামছে না বলেই কর্মীরাও আছেন দ্বিধায়। এসব নানা সংকট নিয়ে বগুড়া বিএনপি সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে উঠতে সম্মেলনমুখী হয়ে পড়েছে দলটি। জেলা বিএনপির কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে সর্বশেষ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে ২০১৯ সালের ১৫ মে মেয়াদোত্তীর্ণ বগুড়া জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটি ভেঙে দিয়ে বগুড়া-৫ আসনের সাবেক এমপি গোলাম মো. সিরাজকে আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। জেলা আহ্বায়ক কমিটি তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট দলের সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করে। একই বছরের ৩১ আগস্টের মধ্যে উপজেলা ও পৌর শাখার ২৪টি সাংগঠনিক থানা শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নেতা-কর্মীরা সম্মেলনমুখী হলে দলের আহ্বায়ক কমিটিতে আবারও পরিবর্তন ঘটে। ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মো. সিরাজের স্থলে আহ্বায়কের দায়িত্ব পান বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউলক করিম বাদশা। রেজাউল করিম বাদশার নেতৃত্বে দলের বিভিন্ন সংগঠনে সম্মেলন করার প্রস্তুতি চলছে। বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে (২০০১-২০০৫) সরকারের পাশাপাশি দলের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বগুড়া থেকে ব্যালটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন শুরু করে। পরবর্তীতে সারা দেশে দলের তৃণমূলের কমিটি গঠনে ব্যালটের মাধ্যমে বা গোপন ভোটে নেতৃত্ব বাছাই শুরু করলেও ক্ষমতার পরিবর্তনের পর সে পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর বগুড়ায় দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে বগুড়ায় আবারও দল পুনর্গঠন কর্মসূচি চলছে। সেই নির্দেশিত মডেলে গোপন ব্যালটে ইতোমধ্যে জেলার ১২ উপজেলার শতাধিক ইউনিয়ন কমিটি এবং ১২ পৌরসভার ১২০টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রত্যক্ষ ভোটে কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে চলছে জেলার অধীনস্থ ২৪টি সাংগঠনিক থানা কমিটির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। অর্ধেকের বেশি থানা কমিটির সম্মেলন শেষে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে কমিটি গঠন হয়েছে। বাকিগুলো চলতি মে মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরই জেলা সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে দলের হাইকমান্ড। তবে কখন সে সম্মেলন হবে তা স্থানীয় নেতাদের অজানা।

 নেতা-কর্মীদের ধারণা, আগামী জুনের মধ্যে জেলা সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে জেলা কমিটির শীর্ষ পদ কারা পেতে পারেন তা নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিএনপির ঘাঁটি বগুড়া জেলা বিএনপির নেতৃত্বকে আগামী দিনে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেতে নেতারা নানাভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দলের ভিতরে বিভক্ত হয়ে পড়ায় দলটি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে নানা সংকট। যে কারণে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে নেতাদের চেয়ে কর্মীদেরই বেশি দেখা যায়। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানান, সভাপতি পদে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ, বর্তমান আহ্বায়ক ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা, সাবেক সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুল বারী তালুকদার বেলাল। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা আলহাজ মোশারফ হোসেন, বিএনপি নেতা এম আর ইসলাম স্বাধীন, আলী আজগর তালুকদার হেনা। তারেক রহমানের ঘোষণা মোতাবেক দলের যে কোনো কমিটির আহ্বায়ক সভাপতি প্রার্থী হতে পারবেন না। সে মোতাবেক বর্তমান আহ্বায়ক রেজাউল করিম বাদশা প্রার্থী হওয়ার কথা নয়। অন্যদিকে ২০১৯ সালের ১৫ মে জেলা বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর তৎকালীন সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম অভিমানে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। সেই অভিমান ভেঙে তিনি এখন দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। গত ঈদের দিন তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে যান। জেলা বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে রাজপথে দলের সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আজগর হেনার বড় ভাই বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু ছিলেন শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি সমর্থিত চারবারের ইউপি চেয়ারম্যান তিনি। পঞ্চম দফায় মনোনয়ন না পেয়ে ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে ফের ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো পদে না থাকলেও আবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে গত ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ছোট ভাই আলী ইখতিয়ার তাজু জাসদ ছাত্রলীগের বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ভাইদের ভিন্ন রাজনীতির কারণে বিএনপি নেতা আলী আজগর হেনাকে নিয়েও চলছে নানা কানাঘুষা। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও কৃষক দলের সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু দলের নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণে রাখতে পদপ্রত্যাশীদের নিয়ে পর্দার আড়ালে খেলে যাচ্ছেন। সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর নেতৃত্ব নিয়েও চলছে নানা কথা। জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা যত কিছুই খেলা খেলিয়ে যাক না কেন শেষ পর্যন্ত লন্ডন থেকে তারেক রহমানের ফোনেই সবকিছু হবে। কারণ বগুড়ার বিএনপিকে তারেক রহমান নিজেই দেখভাল করেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র মো. রেজাউল করিম বাদশা দলের পুনর্গঠন প্রসঙ্গে জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জেলার অধীনস্থ সব ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড সম্মেলন ইতোমধ্যে ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো চলমান রয়েছে। তার প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, তারেক সাহেব চাইলে তিনিও জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী হতে চাইবেন। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম জানান, পদ পাওয়া বড় কথা নয়। দলের জন্য বিগত দিনে কাজ করেছি। আগামী দিনেও কাজ করব। বিএনপির নেতৃত্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করতে সব আন্দোলনে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাব। জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ জানান, শারীরিক চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছি। নেতা-কর্মীরা চাইছেন যেন সভাপতি প্রার্থী হই। কিন্তু আমি চাই দলের ও দেশের জন্য কাজ করতে। পদ-পদবি নিয়ে আমি ভাবছি না।

 

সর্বশেষ খবর