মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

মৃত মাকে জীবিত দেখিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা উত্তোলন

নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর পত্নীতলার নজিপুর পৌরসভার এক নারী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মৃত মাকে জীবিত দেখিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। মজার বিষয় হলো ওই নারী কাউন্সিলরের মা প্রতিবন্ধী না হলেও তাকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে ভাতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া পরিবারের সব সদস্য, আত্মীয়-স্বজনকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোনো না কোনো সেবায় অন্তর্ভুক্ত, পৌরসভার বাইরের মানুষকে পৌর সেবায় অন্তর্ভুক্তকরণ এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিল্ডিং প্লান পাস করিয়ে নেওয়ার জন্য সুপারিশসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, গত পৌর নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো নজিপুর পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ফারজানা খাতুন। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই তিনি নানারকম অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। নিজের সুস্থ মা ফাতেমা বেগমকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে তিনি ভাতায় অন্তর্ভুক্ত করেন।

(ওয়ার্ড নম্বর ৭, সিরিয়াল নম্বর ৩৬) এবং পিতা নেজাম উদ্দিনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন (ওয়ার্ড নম্বর ৭, সিরিয়াল নম্বর ৩২)। গত ৯ মাস আগে কাউন্সিলরের মা মারা গেলেও তিনি মৃত মায়ের নামে প্রতিবন্ধী ভাতা উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন। শুধু তাই নয়, বাবা-বোনসহ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোনো না কোনো সেবায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কাউন্সিলর ফারজানা খাতুনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সেবায় অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়ার নামে উপকার ভোগীদের নিকট অর্থ গ্রহণ, নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিল্ডিং প্লান পাস করে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা, পৌরসভার বাইরের মানুষকে পৌরসভার সেবায় অন্তর্ভুক্ত করা, অকৃষকদের মাঝে ভর্তুকির সার ও বীজ বিতরণ করা ইত্যাদি। হরিরামপুর কলেজ পাড়ার বাসিন্দা মানিক নামের এক ব্যক্তিকে কাউন্সিলর ফারজানা কৃষি ভর্তুকির কার্ড করে দিলেও ওই মানিকের কোনো জায়গা-জমি নেই। মানিক কাউন্সিলর ফারজানার ভগ্নিপতি। নজিপুর নতুনহাট মোড় এলাকার বাসিন্দা হাসান হাবিব সরকার বলেন, তাঁর স্ত্রী নাসরিনের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য কাউন্সিলর ফারজানার নিকট গেলে তিনি টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারার কারণে তাঁর স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড হয়নি। এ বিষয়ে সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারজানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। নজিপুর পৌরসভার মেয়র রেজাউল কবির চৌধুরী জানান, কাউন্সিলর ফারজানা নিজের মৃত মায়ের নামে ভাতা খাচ্ছে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ ছাড়া পৌর এলাকার বাইরে মানুষদের বিভিন্ন সেবায় অন্তর্ভুক্ত করাসহ সব অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার সুলতান আহমেদ বলেন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা খাতুনের মা প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী ছিলেন এটা সত্য। কয়েক মাস আগে তার মা মারা গেছে শুনেছি। আমরা বিষয়টি জানার পর পৌর মেয়রকে নতুন নাম প্রতিস্থাপন করতে বলেছি। নাম প্রতিস্থাপন না করায় গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ভাতার টাকা ওই অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। নিজের মৃত মায়ের নামে ভাতা খাচ্ছেন একজন কাউন্সিলর এটা দেখে অবাক হচ্ছি। তার বাবা নেজাম উদ্দীনের নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর