বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ড

ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় পরিবার

বরগুনা প্রতিনিধি

ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় পরিবার

অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহতদের পরিবার স্বজনদের মৃতদেহ শনাক্তকরণে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য ধরনা দিচ্ছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বিচার শাখায়। বাংলাদেশ পুলিশের ডিএনএ শাখা থেকে বিগত ১৯ এপ্রিল ঝালকাঠি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর ডিএনএ পরীক্ষায় প্রাপ্ত ১৭ জনের একটি রিপোর্ট পাঠানো হলেও দুই মাসের বেশি অতিক্রম হলেও বিধি মোতাবেক ওই রিপোর্ট এখনো বরগুনা জেলা প্রশাসক কিংবা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায়নি। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বিচারিক শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রশাসনিক নিয়ম অনুসারে এখনো তারা সরাসরি ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়ায় সে সব নিহতদের পরিবার ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা জানতে চাইলেও সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট সরাসরি জেলা প্রশাসক বরগুনা বরাবর না পাঠিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঝালকাঠি বরাবর পাঠানোর কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছে নিহতদের পরিবার। অগ্নিকান্ডে নিহত বরগুনা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফেজিয়া মাদরাসার তত্ত্বাবধায়ক হাফেজ মো. মিরাজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি বাবার কবরটির জন্য। আমি নিজের চোখে বাবার কবর দেখতে না পারলেও আমার মা অন্তত স্বামীর কবরটি দেখে সান্ত্বনা পেতেন। শুনেছি ১৭ জনের একটি তালিকা বের হয়েছে। জেলা প্রশাসক অফিস থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। অগ্নিকান্ডে স্ত্রী ও দুই সন্তান হারানো বরগুনার মোল্লার হোড়া গ্রামের রাসেল মিয়া কালু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্যার ৫-৬ মাস হইছে, এখনো ডিএনএ রিপোর্ট পাইনায়। শুনছি চাচাতো ভাইর কাছে ঢাকা থেকে একটা রিপোর্ট আইছে, আমার দুই সন্তানের তালিকা আছে কিন্তু আমার স্ত্রীর নাম নাই। ডিসি অফিস আমাদের কিছু জানায় নায়। এভাবে বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বিচার শাখায় ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট জানতে আসছেন অগ্নিকান্ডে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। সিআইডির ল্যাবরেটরি থেকে পাঠানো ডিএনএ রিপোর্টে অগ্নিদগ্ধ ৩০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ছয়জনকে শনাক্ত করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, হাড় পুড়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব নয় আর সাতজনেরটা প্রক্রিয়াধীন। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভোররাতের দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চ অভিযান-১০, এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৪৭ জন যাত্রী নিহত হয়। এদের মধ্য ২৩ জনের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২৩টি মৃতদেহ বরগুনায় এবং একটি ঝালকাঠিতে সমাহিত করা হয়। ডিএনএ নমুনা ৩০ জনের নেওয়া হলে ১৯ এপ্রিল ২০২২ তারিখের রিপোর্ট ১৭ জনেরটা শনাক্তের কথা উল্লেখ করা হয়। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ নিহত ১৮ জনের পরিবার প্রতি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়। নিহত বরগুনার হাকিম শরীফের মেয়ে হাফসা আক্তার বলেন, শুনেছি আমার বাবা, মা এবং ভাই ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে। আমি ৬ জুন বরগুনা জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি আমার বাবা, মা ও ভাইর মৃতদেহ পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে যাতে দাফন করতে পারি। একই সঙ্গে আর্থিক সহায়তাও চেয়েছি। বরগুনা জেলা প্রশাসন থেকে আমাদেরকে ডিএনএ পরীক্ষায় কোনো রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাকে নিহতদের একজন রিপোর্টের একটি কপি দিয়েছেন, প্রশাসনিক ভাবে এখনো ডিএনএ শনাক্তদের তালিকা পাইনি। প্রশাসনিক ভাবে তালিকা পেলে তাদের পরিবারকে সহযোগিতার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর