পাহাড়ে অনুকূল আবহাওয়া ও নিয়মিত পরিচর্যার ফলে এবারে পাহাড়ের জুমে বেশ ভালো ফলন হয়েছে। জুমে এখন চলছে ধান কাটার মহা উৎসব। কিষানিরা ধান কাটায় ও ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ধান ছাড়াও বিভিন্ন বাহারি সবজির চাষ হয়েছে জুমে। জুম চাষের জন্য সার, বীজের পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রণোদনা চায় জুমিয়ারা। জুমে উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক জাতের বীজ বপনের পরার্মশ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। খাগড়াছড়ির পাহাড়ে পাহাড়ে এখন পাকা ধানের সুবাস। ধান কাটা শেষে জুম ঘরে তা মাড়াই কাজ চলছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় পাকা ধান শোভা পাচ্ছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাহাড়ে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। ধান ছাড়াও জুমে হলুদ, মারফা, আদা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৪০ জাতের সবজির চাষাবাদ হয়েছে। জুমের উৎপাদিত খাদ্য-শস্য দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি জুমে উৎপাদিত সবজি ও কৃষিজ পণ্য বিক্রি করে জুমিয়াদের সংসার চলে। জুমের উৎপাদিত ধান দিয়ে ৬-৯ মাস পর্যন্ত খাবারের জোগান পায় জুমিয়ারা। স্থানীয় জুমিয়ারা (কিষানি) জানান, আমরা জুমের উপর নির্ভরশীল। ধান ছাড়া হলুদ,মারফা, ভুট্টাসহ নানা ধরনে সবজির আবাদ করেছি। এবার আমাদের ভালো ধান হয়েছে। ধান ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছি।
গতবারের তুলনায় এবার ভালো ফলনও হয়েছে। বৃষ্টিও ভালো হয়েছে। তাই ধান উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে আমরা সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ জুম চাষ করে আরও স্বাবলম্বী হতে পারব। তবে জুমে উৎপাদন বাড়াতে সনাতনী জুমের পরিবর্তে আধৃনিক পদ্ধতিতে জুম চাষ করার উপর জোর দিয়েছে কৃষি বিজ্ঞানীরা। জুমের ফলন বাড়াতে গবেষণা করছে পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। আধুনিক পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব জুম চাষ করলে জুমে উৎপাদন বাড়বে ।
পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন জানান, পার্বত্য অঞ্চলের মাটিতে রক্ষণশীল পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হবে। অতিরিক্ত খাড়া পাহাড়ে চাষ করা যাবে না । যে সব ফসল চাষে অতিরিক্ত খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয় তা চাষ করা যাবে না। মাটির ক্ষয়রোধ করা গেলে উর্বরতা বাড়বে এবং জুমের ফলনও বাড়বে। এবার খাগড়াছড়িতে ১৯২০ হেক্টর জমিতে জুমচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১৭৮০ হেক্টর জমিতে জুম চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৬১১ মেট্রিক টন। জুমচাষিরাও সরকারি প্রণোদনায় এসেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার জানান, এবার জেলায় বৃষ্টিপাত ভালো হওয়ায় জুমের ফলন ভালো হয়েছে। জুমচাষিরাও সরকারি প্রণোদনার আওতায় এসেছে। খাগড়াছড়িতে জুম চাষের উপর নির্ভরশীল প্রায় ৫ হাজার কৃষক-কিষানি।