বহু কাক্সিক্ষত বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি বেড়েছে। রেলপথ নির্মাণে স্থান পরিদর্শন শেষে তিনটি জংশন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বগুড়ার কাহালু উপজেলা, সদর রেলওয়ে স্টেশন এবং শাজাহানপুর উপজেলার রানীরহাটে নির্মাণ করা হবে এ জংশন। তিনটি জংশনসহ রেলপথ নির্মাণ কাজ হলে ঢাকার সঙ্গে বগুড়ার দূরত্ব কমবে ১১২ কিলোমিটার।
জানা যায়, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এই দুই জেলার মধ্যে সরাসরি রেলপথ না থাকায় উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোকে যাত্রী ও কৃষিপণ্য নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বর্তমানে সান্তাহার জংশন হয়ে, নাটোর, পাবনা, ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া দিয়ে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে হয়। শুধু বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে তিন জেলা ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে সময় লাগে ৩-৪ ঘণ্টা। আর প্রায় ৪০৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে লেগে যায় ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা। বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুতে সরাসরি ট্রেনে পৌঁছাতে সময় লাগবে এক বা সোয়া ঘণ্টা। বগুড়া থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন সার্ভিস চালু হলে উত্তরের জেলার ট্রেনযাত্রীদের ১১২ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। সেই সঙ্গে কমবে খরচ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা হবে। একটি হলো- বগুড়া স্টেশন থেকে ২ হাজার ৬০০ ফুট পশ্চিমে অবস্থিত বগুড়া শহরের রেললাইন হয়ে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার। অপরটি বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রানীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার। এজন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের জন্য তিনটি জংশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন ওই রেলপথে জংশন ছাড়া আরও সাতটি স্টেশন স্থাপন করা হবে। এগুলো হলো- রানীরহাট, আড়িয়াবাজার, শেরপুর, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ, কৃষাণদিয়া ও সদানন্দপুর। প্রস্তাবিত ৮৪ কিলোমিটার রেলপথের জন্য মোট ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ার সীমানায় ৫২ কিলোমিটার রেলপথের জন্য ৫১০ একর এবং সিরাজগঞ্জ অংশের ৩২ কিলোমিটার অংশের জন্য ৪৫০ একর। রেলওয়ে বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৯ এপ্রিল সিরাজগঞ্জে এবং ২০১৫ সালে বগুড়ায় দলীয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের কার্যালয় থেকে জানা যায়, বর্তমানে বগুড়া থেকে ট্রেনযাত্রীরা নওগাঁ সীমানা হয়ে নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকা যাচ্ছেন। আর বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকায় পৌঁছে যেতে পারবেন আগের থেকে কম সময়ে ও কম খরচে। এতে যাত্রী বাড়বে এবং কৃষিপণ্য সহজে পরিবহনসহ ব্যবসার প্রসার হবে। প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণে টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ প্রকল্পের সব কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।