শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশেষ পদ্ধতিতে ধান চাষে সাড়া ফেলেছে

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

জমির উর্বরতাসহ ফলন বৃদ্ধি ও কম খরচে ‘জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্মিং পদ্ধতি’তে চাষে লাভবান হওয়ায় ঝুঁকছে কৃষকরা। এ পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে, বিরামপুরে ও ফুলবাড়ীর তিন গ্রামে চাষ হচ্ছে ব্রি-৭১, স্বর্ণা-৫ ধান ছাড়াও কলা, পটলসহ সবজি। প্রাকৃতিক উপায়ে ধানসহ সবজি চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কৃষক। তাদের চাষের প্রক্রিয়ায় খরচ কম হওয়ায় অন্য কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছেন। রাসায়নিক সার ব্যবহারে ধানের যে ফলন হয়, এ পদ্ধতিতে তার চেয়ে বেশি ফলন হবে। এ ছাড়া প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের আমদানি খরচ বাঁচবে। কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতি পৌঁছে দিতে পারলে চাষাবাদে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটাতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা। গত ছয় মাস আগে এই পদ্ধতিতে চাষ করতে উদ্বুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করছে বেসরকারি সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশের (সিসিডিবি)। জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্মিং পদ্ধতিতে প্রথমে ‘জীবামুরদ’ তৈরিতে ১০ কেজি গোবর, ১০ লিটার গোমূত্র, ১ কেজি চিটাগুড়, ১ কেজি বেসন ও পরিমাণমতো মাটি দিয়ে মেশাতে হয়। তিন দিন রাখার পর তা জীবামুরদে পরিণত হয়। পরে তা জমিতে দিয়ে ধানের চারা রোপণ করতে হয়। এ পদ্ধতিতে ১১৪ দিনের মাথায় ধান ঘরে তোলা যায়। একজন কৃষক নিজের বাড়িতে খুব সহজে ‘জীবামুরদ’ সার তৈরি করতে পারেন। চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৫-৬ বার জমিতে এ সার প্রয়োগ করতে হয়। এ সার ব্যবহারে খরচ যেমন কম, তেমনই জমির উর্বরতাও বাড়ে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। ভালো ফল পাওয়া গেলে প্রান্তিক কৃষকদেরও এই সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হবে বলে জানায় স্থানীয় কৃষি বিভাগ। নবাবগঞ্জের ছাতনীপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষক বাবলু লাকড়া বলেন, সিসিডিবির সহযোগিতায় প্রথম ‘জীবামুরদ’ সার প্রয়োগ করে এক বিঘা জমিতে ব্রি-৭১ জাতের ধান চাষ করেছি। জমিতে কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। সিসিডিবির দেখানো পদ্ধতিতে নিজের বাড়িতে এই সার তৈরি করে জমিতে প্রয়োগ করেছি। তিনি আরও বলেন, আমার জমিতে কোনো আগাছা হয়নি। পোকামাকড় বা রোগও দেখা দেয়নি। যারা জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়েছেন তাদের চেয়ে আমার জমির ধান ভালো হয়েছে।

এ পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে এ সার ব্যবহারে খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। অথচ একই পরিমাণ জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করলে খরচ হতো ৪ হাজার টাকা।

একই পদ্ধতিতে ধান চাষ করছেন ওই গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল তিরকি। তিনি বলেন, তার জমির ধানগাছও ভালো রয়েছে। নভেম্বরের শেষে কাটা হবে এই ধান। ১৮ শতক জমিতে তিনি স্বর্ণা-৫ চাষ করছেন। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে সিসিডিবির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ হরি সাধন রায় বলেন, কৃষকদের একটা বড় অঙ্ক রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পেছনে ব্যয় করতে হয়। তাতে কৃষকের লাভের অর্ধেক চলে যায়। এই সারের ব্যবহার বিজ্ঞান ভিত্তিক সহজ চাষ পদ্ধতি, যা কৃষকদের নাগালের মধ্যে। এই পদ্ধতিতে চাষে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার-কীটনাশক, আগাছানাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হয় না। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরির সময় জীবামুরদ বা অণুজীব সার প্রয়োগ করতে হয়। এতে ২ কেজি বীজের জন্য ১ কেজি গোবর ও ১ কেজি গোমূত্র লাগে। এই অঞ্চলে ‘জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্মিং’ পদ্ধতিতে ৬ মাস ধরে তিন উপজেলার নবাবগঞ্জের ছাতনীপাড়া, ফুলবাড়ির দামাদামি ও বিরামপুরের বিশ্বনাথপুর গ্রামের ১৩ জন কৃষক ধান, পটল, কলা চাষ করছেন। এ পদ্ধতি অনুসরণে নবাবগঞ্জের দাউদপুর ইউপির হরিরামপুর গ্রামের ছাতনীপাড়ার বাবলু লাকড়া ও উজ্জ্বল তিরকী বিআর-৭১ জাতের ধান চাষ করেছেন। গত রবিবার বাবলু লাকড়ার জমিতে ধান কাটা হয়েছে। কম খরচে ভালো ফলন পেয়েছে। কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতি পৌঁছে দিতে পারলে দেশে চাষাবাদে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটাতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সিসিডিবি’র আওতায় স্বল্প পরিসরে পরিক্ষামূলকভাবে জৈব বালাইনাশক ও জৈব সার ব্যবহার করে ন্যাচারাল ফার্মিং নামে ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ভালো ফলন পেলে আগামীতে অন্য কৃষকদের এ সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হবে।

সর্বশেষ খবর