সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভেজাল ওষুধে সয়লাব

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

ভেজাল ওষুধে সয়লাব

সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে বগুড়ায় দেদার বিক্রি হচ্ছে ভেজাল ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট। বগুড়া শহরের ফুটপাতসহ বিভিন্ন ফার্মেসিতে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে এসব ওষুধ। নামে-বেনামে গড়ে ওঠা ওষুধ কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে এ ওষুধগুলো। যা ব্যবসায়ীরা স্বল্প মূল্যে কিনে ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করছেন চড়া মূল্যে। ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব ভেজাল ওষুধ সেবনে অনেকেই যৌনশক্তি হারাচ্ছে। একই সঙ্গে কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর অন্য দিকে ব্যবসায়ীরা গড়ছেন টাকার পাহাড়। আবার একই সঙ্গে এসব ফার্মেসি বিক্রি হচ্ছে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট। যা নেশা হিসেবে অনেকেই বেছে নিয়েছে। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও হরহামেশাই শহরজুড়ে বিক্রি হচ্ছে এসব ওষুধ। বগুড়া ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে ফার্মেসিগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে এবং জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা থেমে নেই। ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী শুধু খাবার স্যালাইন ও কনডমের বিজ্ঞাপন প্রচার করার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, শহরের রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে অল্প  থেকে বৃদ্ধ বয়সী মানুষকে আকৃষ্ট করে এসব ট্যাবলেট তৈরি করা হয়। সরকারি বিধি মোতাবেক এসব বিজ্ঞাপন জনসম্মুখে প্রচার করা নিষিদ্ধ। তারপরও উঠতি বয়সী কিছু যুবকদের দিয়ে যৌন উত্তেজনার আকর্ষণীয় লিফলেট, পোস্টার বিতরণ করা হচ্ছে। এ কারণে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন অসাধু কিছু ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, বগুড়া শহরের বিভিন্ন মোড়ে, ফুটপাথে, নামি-দামি ফার্মেসিগুলোতে অধিক লাভে ভেজাল ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। এসব ভেজাল ওষুধ বেশির ভাগই সরকারি অনুমোদনহীন নামে-বেনামে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কারখানায় তৈরি করা হয়। সে ওষুধগুলো নিম্নমানের হলেও তার মূল্য প্যাকেটের গায়ে কয়েকগুণ লিখে বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলো ওষুধ বিক্রিতে সহযোগিতা করছে পল্লী চিকিৎসক নামধারী কিছু ডাক্তাররা। তারা এসব ওষুধ কোম্পানির নিকট থেকে নানা ধরনের উপহার নিয়ে নিরীহ মানুষকে বুঝিয়ে লম্বা প্রেসক্রিপশন হাতে ধরে দেন। এসব নিরীহ মানুষ শহরে গড়ে ওঠা ফার্মেসিগুলো থেকে চড়া দামে কিনছেন কোম্পানির ভেজাল ওষুধ। বগুড়া ড্রাগ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরে ১৯টি ইউনানী ওষুধ কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বন্ধ রয়েছে। সরকার কর্তৃক ১৯৮২ সালে ২১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করা হলেও সেটি আগের অবস্থানেই রয়েছে। সরকারি আইন অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর পর ওষুধের মূল্য নবায়ন করার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। যার ফলে ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বেড়েইে চলেছে। বগুড়ায় বৈধ ফার্মেসি রয়েছে ৫ হাজার ৬০০টি। বগুড়ায় সরকার অনুমোদিত এলোপ্যাথিক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে দুটি বন্ধ থাকায় চারটি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ওষুধ প্রস্তুত করছে। এগুলো হলো- এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড, ওয়ান ফার্মা লিমিটেড, ডক্টরস কেমিকেল লিমিটেড, সিপলা লিমিটেড। এ ছাড়া বিভিন্ন নামে যে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো সরকার অনুমোদনহীন। ঔষধ প্রশাসন বগুড়ার সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম মোল্লা জানান, সরকারি বিধি অনুযায়ী শুধু খাবার স্যালাইন ও কনডমের বিজ্ঞাপন প্রচার করার অনুমতি রয়েছে। যদি কেউ যৌন উত্তেজনার আকর্ষণীয় লিফলেট, পোস্টার বিতরণ এবং বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে তাহলে সেটা অপরাধ। এসব বিজ্ঞাপন সরকারিভাবে প্রচার করা নিষিদ্ধ। তিনি আরও জানান, বগুড়া শহরে নকল এবং ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানায় অনেকবার অভিযান চালানো হয়েছে। জরিমানাও করা হয়েছে। অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে। যে ফার্মেসিগুলোতে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, ট্যাপেন্টাডোলসহ ভেজাল ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। বগুড়া সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ শফিউল আজম জানান, ভেজাল ওধুষ ও যৌন উত্তেজনা ট্যাবলেট সেবন করলে লেভার এবং কিডনির সমস্যা হতে পারে। সেই সঙ্গে শরীরে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাও দেখা দিতে পারে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারে এসব ভেজাল ওষুধ থেকে সাধারণ মানুষকে বিরত রাখতে হবে। যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও ভেজাল ওষুধ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর