বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

এক নদীতে গোসল করে দুই দেশের নাগরিক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত বাংলাদেশ-ভারতের আন্তসীমান্ত মহানন্দা নদীর দুই পাড়ে গোসল করেন দুই দেশের নাগরিক। জানা গেছে, প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মহানন্দা নদীর উৎপত্তিস্থল নেপালের হিমালয় পর্বতের ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলার অংশে। ভারতের দার্জিলিং থেকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উত্তর দিনাজপুর দিয়ে মালদা জেলা হয়ে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করেছে এই নদী। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে মহানন্দা নদীর ওপারে ভারতের মালদা জেলার আইহো থানার শুকনগর এলাকার লোকজন এবং নদীর উল্টো দিকে এপারে ভোলাহাট উপজেলার গীলাবাড়ি, গোহালবাড়ী, বজরাটেক, আলীসাহাপুর ও মুন্সীগঞ্জ এলাকার লোকজন গোসল করছে। বলা বাহুল্য যে, এখানে মহানন্দা নদীই আলাদা করেছে দুটি দেশকে। এমনকি দুই দেশের সীমানা চিহ্নিত করেছে মহানন্দা নদী। কোথাও নদীর মাঝ বরাবর, আবার কোথাও নদীর কিনারা দিয়ে দুই দেশের সীমান্তের শূন্য রেখা। ভোলাহাটের মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকেই দুই দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারতের লোকজন গোসল করে মহানন্দা নদীতে। তবে বাংলাদেশেরই সবচেয়ে বেশি মানুষ গোসল করে নদীতে। এ ছাড়াও কাপড় চোপড় পরিষ্কার করার কাজেও নদীতে যায় নদীপাড়ের সিংহভাগ নারী-পুরুষ।

অন্যদিকে ভারতীয় নাগরিকদের সীমানার কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে আসতে হয় নদীতে। এ জন্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ তাদের দেশের নাগরিকদের তারের বেড়া পেরিয়ে শূন্য রেখায় যাওয়ার অনুমতি দেয়। কারণ তারের বেড়া পেরিয়ে নদীর ওপারে ফসলি জমি রয়েছে সেদেশের নাগরিকদের। তবে স্থানীয়রা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দুই দেশের নাগরিকরা দীর্ঘদিন ধরে মহানন্দা নদীতে গোসল করে। বিজিবির পক্ষ থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়মিত এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়। তবে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে শূন্য রেখায় থাকা নদীতে গিয়ে অনেকেই গোসল করে। আবদুল খালেক নামে স্থানীয় এক নাগরিক বলেন, নদীই এখানে আলাদা করেছে দুটি দেশকে। কিন্তু দুই দেশের নাগরিক হলেও আমাদের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন মজবুত রয়েছে। তাই দীর্ঘদিন ধরেই একই নদীতে বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষ গোসল করি। তবে আমরা আমাদের পাড়ে এবং তারা তাদের পাড়ে গোসল করে। এতে আজ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। তারা তাদের মতো, আমরা আমাদের মতো গোসল করি, কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক কৃষক বলেন, এখানে বিজিবি বা বিএসএফ-এর দিক থেকে কোনো জটিলতা নেই। তাই দুই দেশের নাগরিকরা একটি নদীতে গোসল করতে পারে। তবে নদীতে গোসল করা নাগরিকদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই বেশি। কারণ ভারতের দিকে নদী পার হয়েই কাঁটাতারের বেড়া। তাই ভারতীয়দের গোসল করা মানুষের মধ্যে প্রায় সবাই কৃষক। বিএসএফ-এর বিশেষ অনুমতি নিয়ে এসে তারা নদীপাড়ে ফসলের জমিতে কাজ করে এবং কাজের মাঝে দুপুরে মহানন্দা নদীতে গোসল করে তারা। তবে মহানন্দা নদীতে দুই দেশের শূন্য রেখায় অবস্থান করাকে অপরাধ বলে মনে করেন ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আমির হোসেন মোল্লা। তিনি জানান, বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে বসবাসকারী নাগরিকদের শূন্য রেখায় না যাওয়ার জন্য সতর্ক করে। তবে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকেই শূন্য রেখায় থাকা নদীতে গোসল করে। তিনি আরও জানান, শূন্য রেখায় দুই দেশের নাগরিকদের অবস্থানের ফলে সীমান্তে অস্ত্র-মাদক চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন অপরাধের সম্ভাবনা বাড়ে। তবে এ বিষয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কোনোভাবেই দুই দেশের নাগরিকদের শূন্য রেখায় যেতে দেওয়া হবে না।

সর্বশেষ খবর