মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কুড়িগ্রামে মেলার নামে রমরমা জুয়া

হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা ॥ নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে

খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে মেলার নামে রমরমা জুয়া

কুড়িগ্রামে দুই সপ্তাহ থেকে চলছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। কিন্তু মেলা পরিচালনার নিয়ম অনুযায়ী এ মেলা চলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। মেলার নামে চলছে র‌্যাফেল ড্র ও রমরমা জুয়ার ব্যবসা। উঠতি বয়সীসহ সাধারণ মানুষ জুয়া ও র‌্যাফেল ড্র-র লোভে পড়ে প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হচ্ছে। শিল্প ও বাণিজ্য মেলা নাম হলেও নেই কোনো স্থানীয় শিল্পের পসরা। নিত্যপণ্য জুতা, স্যান্ডেল, কাপড়, খাবারের আচার, খেলনা, চটপটি আর পকেট কাটার নানা কৌশল ছাড়া মিলছে না কিছুই। লটারিসহ মেলার ভিতর টিকিট কাটার (জাদু, সার্কাসসহ ১২টি ইভেন্ট) নানা আইটেম থাকলেও সরকারি কোষাগারে এক টাকাও রাজস্ব জমা হয়নি দুই সপ্তাহে। অথচ মেলা পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠান দরিদ্রপীড়িত এ জেলা থেকে প্রতিদিন ৫-৬ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় কুড়িগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও প্রিন্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট যৌথভাবে এসব কাজ করলেও দেখার কেউ নেই। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে মেলার কার্যক্রম। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় মেলার সামনের সড়কে যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে। ফলে ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় যাতায়াত বিঘ্নিত হচ্ছে প্রতিদিন। কুড়িগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ধরলা ব্রিজের পূর্বমাথায় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত এ মেলা পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে। চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মাসিক ১৫ লাখ টাকার চুক্তিতে প্রিন্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে মেলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। মেলা অনুমোদনের ৩০টি শর্তাবলির মধ্যে অধিকাংশ শর্ত ভঙ্গ করে প্রিন্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট মেলা থেকে কোটি টাকা লুট করে নিচ্ছে। ১৪ নম্বর শর্ত ভঙ্গ করে মেলায় প্রবেশের টিকিটের ওপর লটারি করা হচ্ছে। লটারির লোভনীয় পুরস্কারের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এ লটারি সুষ্ঠু ও জমজমাট করতে প্রতিদিন শহর ও গ্রামাঞ্চলে করা হচ্ছে মাইকিং। মেলায় দর্শনার্থীর ভিড় তো দূরের কথা প্রতিদিনই বিশাল প্যান্ডেল করে মঞ্চে পুরস্কারের মোটরসাইকেলসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদর্শন করা হচ্ছে। ফলে লোভে পড়ে একজন দর্শনার্থী একা মেলায় প্রবেশ করলেও টিকিট কাটছেন একাধিক। অনেকে দর্শনার্থী লটারির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মেলায় জনৈক শাহাবুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলেন, বাণিজ্য মেলার গেটের দুই পাশে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশাল ছবি টাঙিয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। দূর থেকে দেখলে কোনো সরকারি অনুষ্ঠানই মনে করবে সাধারণ মানুষ। এরকম একটি মেলার সঙ্গে প্রধান দুই নেতার ছবি টাঙানোতে আমরা বিস্মিত ও মর্মাহত। মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, মেলা সুন্দরভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। নিয়ম মেনে করা হচ্ছে। সমস্যা থাকলে আসেন সামনাসামনি কথা বলি। চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল আজিজ জানান, মেলা পরিচালনায় যেসব শর্ত দেওয়া আছে তা পুরোপুরি মানা সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ জানান, নীতিমালা অনুযায়ী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে যদি কোনো অনিয়ম হয়, আমরা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সর্বশেষ খবর