শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাড়ছে রোগ, ওষুধ কিনতেই শেষ হচ্ছে আয়ের টাকা

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

বাড়ছে রোগ, ওষুধ কিনতেই শেষ হচ্ছে আয়ের টাকা

একটি বেসরকারি হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নিতে এসেছেন ২১ বছর বয়সী মাহবুব আলম। সে স্থানীয় কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানান, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা চারজন। তিনজনই অসুস্থ। তার বাবা কৃষি শ্রমিক। দিনে আয় করেন ৪০০-৫০০ টাকা। প্রতিদিন ৪০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়তি রোজগারের জন্য বাবার সঙ্গে তিনিও শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু বেশকিছু দিন থেকেই বুকে ব্যথা। এখন আর কাজ করতে পারে না। বাবার আয়ের ওপরই সংসারের অন্যান্য খরচ আর ওষুধ কিনতে হচ্ছে। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ছোট ছোট নদীবেষ্টিত জেলা পঞ্চগড়ের অণুচিত্র এটি। এ জেলায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস। স্থানীয় অধিবাসী, চিকিৎসক এবং ওষুধ ব্যবসায়ীরা আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলছেন, জেলায় বাড়ছে নানা রোগের সংক্রমণ। প্রতিনিয়ত হৃদরোগে মারা যাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সীর মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, এ জেলার ৮০ ভাগ পরিবারের ৬০ শতাংশ মানুষ ওষুধের ওপর নির্ভরশীল। চিকিৎসা করতে ব্যয় হচ্ছে প্রচুর টাকা। দিনের আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে ওষুধ কিনতে। ওষুধের দোকানগুলোতে বাড়ছে ভিড়। চিকিৎসকরা বলছেন, সচেতনতার অভাবে এই জেলায় মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন । হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং গ্যাসজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেশি। স্থানীয়রা বলছেন, এ জেলার প্রত্যেক পরিবারেই ওষুধ কিনতে হচ্ছে। সব শ্রেণির মানুষ ওষুধ নির্ভর হয়ে পড়ছে। হাটবাজারগুলোতে নিত্যনতুন লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান গড়ে উঠছে। আর এসব দোকানে বাড়ছে ওষুধ ক্রেতার ভিড়। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা বলছেন, ওষুধ কিনতেই চলে যাচ্ছে অনেক টাকা। হাড়িভাষা এলাকার মমিনুল ইসলাম (৪৭) জানান, ওষুধ কিনতেই টাকা শেষ । ভালো মন্দ খাব কী? আর জমাবোই বা কী? দোকানে ওষুধের দাম করা যায় না। দোকানদার যা চায় তাই দিতে হয়। দিন দিন ওষুধের দাম বাড়তি। ওষুধ বিক্রেতারাও বলছেন একই কথা। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ওষুধ কিনে নিয়ে যায়। ওষুধের মানও এখন ভালো নয়। দামও বাড়ছে। প্রত্যেক পরিবারে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। হাড়িভাষা এলাকার রাকিব ফার্মেসির মালিক জাকির হোসেন জানান, প্রত্যেক পরিবারের ৮০ ভাগ মানুষ এখন ওষুধ খাচ্ছেন। তারা মুড়ি মুরকির মতো ওষুধ খাচ্ছেন। ওষুধ খেয়েই পেট ভরে যায়। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে স্থানীয় চিকিৎসক ও রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং গ্যাসজনিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সচেতনতার অভাব, কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়া এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের ফলেই এসব রোগ বাড়ছে বলে মত দিয়েছেন তারা। আধুনিক সদর হাসপাতালের হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, শহর অথবা গ্রামীণ পর্যায়ে এখন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং গ্যাসজনিত রোগ বাড়ছে। কারণ মানুষ হয়ে পড়ছে যন্ত্রনির্ভর। কায়িক পরিশ্রম কমে যাচ্ছে। সার-কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে। মানুষের আয়ের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে ওষুধের পেছনে। এর জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবই দায়ী।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ওষুধ নির্ভরতা কমাতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের পরামর্শের কথা বললেও চোখে পড়ার মতো এ উদ্যোগ নেই। তারা বলছেন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ মন্দির, মসজিদে এ জাতীয় সচেতনতার বার্তা প্রদান করা যেতে পারে।

আধুনিক সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আফরোজা বেগম জানান, এ ব্যপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষের জীবনাচরণ ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। আর সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, মন্দির, মসজিদ, গির্জা এবং জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন সভায়, সেমিনারে, ওয়াজ মাহফিলে এসব বিষয় তুলে ধরতে হবে।

সর্বশেষ খবর