সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে অতি জোয়ারের পানিতে দিনে দুবার প্লাবিত হচ্ছে ভোলার নিম্নাঞ্চল। কয়েকদিন ধরে জোয়ারের সময় কয়েক ফুট পানির নিচে চলে যায় মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী এলাকা। বিশেষ করে ডুবে যায় ইলিশা ফেরিঘাট, লঞ্চঘাটসহ রাজাপুর, কাচিয়া, বাপ্তা, ধনিয়া, শিবপুর, পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নসহ বাঁধের বাইরের অন্তত ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার বাড়িঘর।
ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের শত শত পুকুর, ঘের ডুবে ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ। নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার একর সবজি খেত ও আমনের বীজতলা। দিনে দুবার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে রয়েছেন বাসিন্দারা। এ ছাড়া অতি জোয়ারে বেড়িবাঁধের বাইরে দিনে দুবার প্লাবিত হওয়ায় অনেক পরিবারে চুলা জ্বলছে না। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে নিম্নআয়ের হাজার হাজার মানুষ। পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া খালের তীরবর্তী লাশকান্দা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাঘাট সব পানির নিচে। ওই গ্রামের প্রতিটি বাড়িঘর দুই-আড়াই ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। জোয়ারের সময় অনেকে ঘরের মধ্যে মাচায় বসে থাকেন। গ্রামের বাসিন্দা রহিজল, ইউসুফ, সফিজল, আবুল কালাম জানান, এক সপ্তাহ ধরে দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। জনপ্রতিনিধিরা তাদের খবর নিচ্ছেন না। একই অবস্থা পূর্ব ইলিশা, রাজাপুর, কাচিয়া, ধনিয়া, বাপ্তা শিবপুর এলাকায়। শিবপুর ইউনিয়নের কালিকীর্তি এলাকার লোকজন জানান, জোয়ারের সময় বাঁধের বাইরের সব বাড়িঘর ডুবে যায়। দুই-তিন ঘণ্টা পর আবার ভাটায় পানি নামে। নিয়মিত প্লাবিত হওয়ায় এলাকাবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। সদর উপজেলার কন্দ্রকপুর গ্রামের ছাদেক হাওলাদার জানান, ছয় দিন ধরে এলাকার রাস্তাঘাট জোয়ারের সময় দুই থেকে তিন ফুট পানির নিচে চলে যায়। পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয় ওই এলাকার প্রায় ৫ হাজার মানুষকে। একই এলাকার নুরুল ইসলাম জানান, তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে লাউ এবং ৫৬ শতাংশে ধুন্দল আবাদ করেছেন। পানিতে সব গাছ মরে যাচ্ছে। এ ছাড়া তার ১২ শতাংশ জমির আমনের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে।
ইলিশা ফেরি ঘাটের ম্যানেজার পারভেজ আলম জানান, অতি জোয়ারের পানিতে ফেরির দুটি পন্টুন ও গ্যাঙওয়ে ডুবে যাওয়ায় চলাচল ব্যাহত হয়। জোয়ারের সময় লোড-আনলোড বন্ধ থাকে। ভোগান্তিতে পড়েন পণ্যবাহী ট্রাক চালক ও শ্রমিকরা। কয়েকদিন ধরে ইলিশা ফেরিঘাটের এমন পরিস্থিতি। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে নদনদীর পানি বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার ছিল ৮৯ সেন্টিমিটার। শুক্রবার বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়। তিনি আরও জানান, তিন-চার দিন পর হয়তো পানি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।