খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের পূর্ণচন্দ্র কার্বারিপাড়ার কৃষক রঞ্জন চাকমা ছয় কানি (প্রতি কানি সমান ৪০ শতক) জমি লিজ নিয়ে চাষ করেছেন। কানিপ্রতি জমিতে লিজ বাবদ দিতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা। আগস্ট মাসে দুই দফায় বন্যায় ডুবেছে তার খেত। সবশেষ চারা রোপণ করার কয়েক দিন পর থেকে বন্যা শুরু হয়। এতে তার জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এখন বন্যার পানি কমলেও নতুন করে চাষ করার মতো সময় নেই। তা ছাড়া সার, বীজ এবং শ্রমিকের মজুরি বাবদ যে অর্থ প্রয়োজন সেটাও হাতে নেই। এখন আমরা কী করব। এভাবেই মনের কষ্টের কথা প্রকাশ করেন দিশাহারা এ কৃষক। পর পর চার বারের বন্যায় এ জেলার পাঁচটি উপজেলার কৃষকদের রোপা আমন, আউশ ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর আমন, ১৪৬ হেক্টর আউশ ও ৩৫৩ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১১ হাজার কৃষক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সদর উপজেলা কৃষি র্কমর্কতা মুক্তা চাকমা জানান, এখানে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কৃষক এবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দীঘিনালা উপজেলা। মাইনী নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠায় এটি মাইনী ভ্যালি হিসেবে পরিচিত। উপজেলার মেরুং ইউনিয়ন এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানির নিচে। এখানকার কৃষি জমির সর্বনাশ হয়েছে। মেরুং বাজার এলাকা, ভুয়াছড়ি, চংড়াছড়ি, রশিকনগর, বেতছড়ি, মধ্য বোয়ালখালি, বোয়ালখালি, তারাবুনিয়া, পাবলাখালি, শান্তিপুরা, মিলনপুরসহ ৫০টির বেশি গ্রাম সবশেষ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি চার থেকে পাঁচ দিন স্থায়ী হওয়ায় অধিকাংশ ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। মেরুংয়ের আরেক কৃষক হোসেন বলেন, দুই কানিতে চাষ করছি। এ মাসে দুবার ধান রোপণ করেছি। সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর কিছু করার নেই।
দীঘিনালা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন জানান, বন্যায় আমনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ৭৬৫ হেক্টর জমির আমন চারা নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩২৩ কৃষক। ৯০ হেক্টর আউশ এবং ১৩৯ হেক্টরের সবজি খেত নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ৮০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।