একটি প্রভাবশালী মহল লালমনিরহাটে সতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছে। এর মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। জেলার আদিতমারী উপজেলা দিয়ে সতী নদী প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি কোথাও সতী, কোথাও মরাসতী আবার কোথাও ভাটেশ্বরী নামে পরিচিত। এটি তিস্তা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, আদিতমারীর সারপুকুর ও ভাদাই সীমান্তের কদমতলায় সেতুর ভাটিতে দিনরাত ২০-২৫টি ট্রাক্টর দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। এ কারণে কদমতলায় সেতুটির উজানে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। ইতোমধ্যে একটি রাস্তার অর্ধেকাংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলে নদী ভাঙন ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে মাত্র। উজানে নদী হতে অবৈধ বালু উত্তোলন করা হলেও তা বন্ধ করা হচ্ছে না। গ্রামবাসীরা এই অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে একাধিকবার ইউএনওকে অভিযোগ দিয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এরপরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি ৯৯৯-এ কল করে সহায়তা চেয়েও পাননি গ্রামবাসী। বালু খেকোদের দৌরাত্ম্য থামছে না। তারা দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। প্রভাবশালীরা উল্টো বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছে।
সারপুকুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক রমজান আলী বলেন, এখানকার অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে রাস্তা, বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। কয়েকদিন পরে উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। বরং দিনদিন বেড়েই চলছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় প্রশাসন এসব স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। প্রতিবাদ করলে প্রভাবশালীরা মাস্তান দিয়ে হয়রানি করে। তাদের বিরুদ্ধে থানা পুলিশের সহায়তা পাওয়া যায় না। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ সম্পর্কে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর ই এলাহী সিদ্দিকীকে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি দেখছি। অবশ্যই এটা বন্ধ করা হবে। কিন্তু অভিযোগের সাত দিন অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে সতী নদীর প্রায় ৩৫ কিমি খনন করা হয়। শত কোটি টাকা ব্যয়ে নদীটি খননের পর এখন সারা বছর পানি প্রবাহ থাকছে। নদী খননের অতিরিক্ত বালু দিয়ে দুই পাড় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই পারও ট্রাক্টর লাগিয়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছে বালু খেকোরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তো তেমন জনবল নেই যে, প্রভাবশালীদের সঙ্গে লড়বে বললেন নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল রায়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ওই এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।