বৈশাখের শুরুতেই হবিগঞ্জে হাওরে ধান কাটা শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে পাকা ধান কাটতে পারছেন না অনেক কৃষক। এ অবস্থায় ঝড়, অতিবৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকদের। কৃষকরা জানান, এবার চৈত্র মাসে হাওরে বৃষ্টি হয়নি। বৈশাখ মাসে অতিবৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আগে রোপণ করা ধান পেকেছে। এসব জমির ধান কাটতে তোড়জোর করছেন তারা। তবে শ্রমিকসংকটে তা ব্যাহত হচ্ছে। সময়মতো ধান গোলায় তোলা নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তারা বলছেন, জেলার বাইরে থেকে এখনো শ্রমিক আসা শুরু হয়নি। অল্প সংখ্যক স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া স্থানীয় শ্রমিকরা ধান কাটতে বেশি মজুরি নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাওর-বাঁওড় বেষ্টিত হবিগঞ্জ জেলার বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। এর ওপরই নির্ভর করে তাদের জীবন-জীবিকা। বৈশাখ মাস শুরু হলেই ধুম পড়ে ধান কাটার। উৎসবের আমেজে কৃষকরা গোলায় ভরেন ধান।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এবার জেলার ৯ উপজেলায় শতাধিক হাওরে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮৪ হেক্টর জমিতে তিন ধরনের বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার ৮৮৫ হেক্টর হাইব্রিড, উফসি জাতের ৭২ হাজার ৮০১ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে। এ থেকে ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫১৮ টন ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। হাইব্রিড জাতের হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৬৮ টন, উফসিতে ৬ দশমিক ৯৩ টন ও স্থানীয় জাতের ধান থেকে ১ দশমিক ৯ টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সে অনুযায়ী বোরো থেকে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩৪৯ টন চাল উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের কৃষক লাদেন চৌধুরী বলেন, হাওরে ধান পেকেছে। তা কাটার জন্য স্থানীয় শ্রমিকের জন্য তিন দিন ধরে ঘুরছি, পাচ্ছি না। শ্রমিকের সংখ্যা কম হওয়ায় তাদের চাহিদা বেশি। প্রয়োজনে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হলে পাকা ধানের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান বলেন, স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে হাওরের সব ধান কাটা সম্ভব নয়। জেলার বাইরে থেকে শ্রমিক না এলে এ সংকট কাটবে না। বৈশাখের শুরুতে জেলার বাইরে থেকে কিছু শ্রমিক এসেছে, তবে তা যথেষ্ট নয়। লাখাই উপজেলার স্বজন গ্রামের সুশীল দাস বলেন, এরই মধ্যে তার ৫ একর জমির ধান পেকেছে। শ্রমিক না পাওয়ায় কাটাতে পারছেন না। তিনি বলেন, পাকা ধান বেশি দিন জমিতে থাকলে ঝরে যাবে। তাই আমি শ্রমিক খুঁজছি। হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ধান কাটা এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। হাওরে যেসব ধান পেকেছে তা স্থানীয় শ্রমিকরা কাটছেন। হারভেস্টার দিয়েও কাটা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যেই জেলার বাইরে থেকে শ্রমিক আসা শুরু হবে। তারা এলেই শ্রমিকসংকট কেটে যাবে।