বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নে মালদহ নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ বলাইরহাট-লোহাকুচি সড়ক ও একটি সেতু। ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে সড়কটির অর্ধেকের বেশি। এর বিকল্প সড়কে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের। ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারী লোকজন।
জানা গেছে, প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সড়কটির অর্ধেকই ইতোমধ্যে মালদহ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একসময় ১৮ ফুট প্রশস্ত এ সড়কটি এখন কোথাও কোথাও মাত্র ৫ থেকে ৮ ফুট চওড়া হয়ে গেছে। যে কোনো সময় নদীগর্ভে যেতে পারে গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতুও। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙন রোধে এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এ রাস্তা দিয়ে ওই এলাকার সাতটি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিয়মিত চলাচল করে।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, গত বছর মালদহ নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বগুড়াপাড়া ও মালগাড়া পাড়ার অন্তত ১০টি ঘরবাড়ি এবং প্রায় ৫০ বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। বর্তমানে আরও অর্ধশতাধিক বসতভিটা ও প্রায় ২০০ বিঘা জমি রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। বর্ষা শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের। এ অবস্থায় ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বগুড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন (৫৮) বলেন, ‘গত বর্ষায় আমার তিন বিঘা জমি আর বসতভিটা চলে গেছে মালদহ নদীতে। এখন রাস্তা আর সেতুটাও যদি চলে যায়, তাহলে আমাদের চলাচলের পথই থাকবে না।’ এমনই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন পাশের মালগাড়া গ্রামের বুলবুলি বেওয়া (৬৫)। তিনি বলেন, আধা বিঘা জমি নদীতে গেছে। এখন যদি সড়ক ভেঙে পড়ে, তাহলে আমরা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব।
গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান রমজান আলী বলেন, দুই বছর আগেও নদী ছিল সড়ক থেকে অন্তত ৪০০ মিটার দূরে। এখন সেই নদী এসে সড়কের পেটে ঢুকেছে।মালদহ নদী সম্পর্কে জানা গেছে, এটি বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত। ছোট হলেও বর্ষায় খুবই প্রমত্ত। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ১৮ মিটার। সর্পিলাকার প্রবাহের কারণে বর্ষাকালে প্রবল ভাঙন সৃষ্টি করে মালদহ।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ৪ জুন আমরা মালদহ নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্র জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে।