নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মধুমতী নদী। সম্প্রতি নদীর এ অংশে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। বিলীন হচ্ছে পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চরমধুপুর গ্রামের আবাদি জমি, রাস্তা ও বিস্তীর্ণ জনপদ। ভিটামাটি হারিয়ে অনেক পরিবার হয়ে পড়েছে সহায়সম্বলহীন। ভাঙনঝুঁকিতে পহরডাঙ্গা ও সরসপুর গ্রামের শতবর্ষী ঈদগাহ ও কবরস্থান। মধুমতী তীরের বাসিন্দাদের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রায় দুই যুগ ধরে কালিয়ায় মধুমতী নদী বিভিন্ন সময়ে ভাঙলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সারা বছর নদীতে পানি কম থাকলেও বর্ষা মৌসুমে প্রবল স্রোত দেখা দেয়। চরমধুপুর গ্রামে নদীর বাঁক থাকায় পানি সরাসরি পাড়ে আঘাত হানে। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে বর্ষার সময় নদীর করাল গ্রাসে এখন বিপর্যস্ত গ্রামটি। সরসপুর ও পহরডাঙ্গা গ্রামের ঈদগাহ ও কবরস্থানও নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। প্রবল স্রোতে ইতোমধ্যে ঈদগাহ ও কবরস্থানের কিছু অংশ ধসে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে ঐতিহাসিক এ স্থাপনাগুলো একেবারে হারিয়ে যাবে। দুই গ্রামের হাজার হাজার মানুষ শত বছর ধরে ঈদগাহে ঈদুল ফিতর ও আজহার নামাজ আদায় করছে। গ্রামের কেউ মারা গেলে জানাজাও আদায় হয় এখানে। পাশাপাশি শতবর্ষী কবরস্থানে শায়িত স্থানীয় অনেকের পূর্বপুরুষ।
ঈদগাহ ও কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সভাপতি শিকদার আহসান আলী বলেন, ‘প্রতি বছর ভাঙতে ভাঙতে নদী এখন গ্রামের একমাত্র কবরস্থানটির কাছাকাছি চলে এসেছে। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করেও কার্যকর ফল পায়নি। এভাবে চলতে থাকলে ঈদগাহ ও কবরস্থান দুটিই নদীতে ভেসে যাবে।’ এলাকাবাসীর দাবি দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার।
পহরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মোরাদ আলী বলেন, ‘আমি কৃষিকাজ করে সংসার চালাই। ইতোমধ্যে আমার প্রায় ১ বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে মধুমতীর তীর রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’ চরমধুপুরের রফিকুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ‘দুই যুগ ধরে ভাঙন চলছে। কতবার যে বসতভিটা ভাঙল হিসাব নেই। বর্তমান ভিটাটা বাঁচবে কি না জানি না।’ পহরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মল্লিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘মধুমতীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। শিগগিরই পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নড়াইল অফিসে লিখিত আবেদন করব। প্রয়োজনে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করব মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচি।’জেলা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী সায়েম রাশেদ বলেন, ‘পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চরমধুপুর গ্রামে ইতোমধ্যে জরিপ হয়েছে। নদীর গভীরতা নির্ণয়সহ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে সার্বিক পরিস্থিতি। শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এর পরই হাতে নেওয়া হবে ভাঙন রোধে সম্ভাব্য প্রকল্প।’ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, ‘নদীর তীর রক্ষার জন্য বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’