উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে ধরলার পানি বাড়া-কমার সঙ্গে ১৩টি পয়েন্টে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দিশাহারা পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। প্রতিদিনই নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি, ঘরবাড়ি ও বসতভিটা। কৃষক পরিবারগুলো হারাচ্ছে জীবিকাসহ বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটুকুও।
স্থানীয়রা জানান, ধরলার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের দেবনাথপাড়া, কুরুল, মেঘারাম, ছয়মাথা, চর বুদারু, পাটগ্রামের তিনটি পয়েন্ট, পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়কম ল, চর গোড়কম ল, শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের হকের বাজার। দেবনাথপাড়া গ্রামের কৃষক আবদার হোসেন (৬৫) বলেন, শেষ সম্বল চার বিঘা জমি গেল সপ্তাহেই ধরলার পেটে চলে গেছে। এর আগে নদী কেড়ে নিয়েছে আরও ১২ বিঘা। এখন শুধু আট শতকের ওপর বসতভিটাটুকু বাকি। ভোলানাথ দেবনাথ (৬০) বলেন, ধরলার ভাঙনে গেল সপ্তাহেই পাঁচ বিঘা জমি চলে গেছে। বাকি জমিগুলোও এখন হুমকির মুখে। আমাদের সংসার একসময় স্বচ্ছল ছিল। এখন পথে বসার উপক্রম। মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জোনাব আলী বলেন, দেবনাথপাড়া এলাকায় শতাধিক বিঘা জমি ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। আরও প্রায় ৩০০ বিঘা জমি হুমকির মুখে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হবে। ফুলবাড়ীর চর গোড়কম ল এলাকার কৃষক আলা-বকস (৬৫) বলেন, আমার দুই বিঘা জমি আর ছয় শতাংশ বসতভিটা গেছে নদীতে। এখন রাস্তার পাশে কোনোমতে বাস করছি। জমি কেনার বা ঘর করার সামর্থ্য নেই। একই এলাকার মাহমুদা বেগম (৩৪) বলেন, নদী এখন ঘরের একেবারে কাছে চলে এসেছে। যে কোনো সময় বসতভিটাও গিলে ফেলবে। আগে তিন বিঘা জমি ছিল, সেটাও গেছে। চর গোড়কম ল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান, ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে স্কুল, মাদরাসা, মুজিব কেল্লার ভবনসহ দুই শতাধিক বসতভিটা। এক সপ্তাহে নদীতে গেছে ১৫টি ঘরবাড়ি এবং শতাধিক বিঘা আবাদি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, গত বছর চর গোড়কম লে ৭ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। এখন আর কোনো ব্যাগ মজুত নেই। নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ডিসি রকিব হায়দার বলেন, নদীভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।