টানা খরায় দিশাহারা ছিলেন দিনাজপুরে কৃষক। ভরা বর্ষায়ও তারা ছিলেন আকাশের দিকে তাকিয়ে। আমন ধানের চারা প্রস্তুত থাকলেও পানির অভাবে তা রোপণ সম্ভব হচ্ছিল না। তবে খরার পর কয়েক সপ্তাহে ভারী বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরেছে কৃষকের মাঝে। এখন জমিতে জমেছে পানি, তাই আমন চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, কেউ জমি তৈরি করছেন, কেউ বা আগাছা পরিষ্কার করে সার দিচ্ছেন। অনেকেই রোপণের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা সেচ ছাড়া আমন ধান চাষের স্বপ্ন দেখছেন।
কৃষক বলছেন, জমিতে রোপা আমন চাষের উপযুক্ত সময় আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে রোপণ কার্যক্রমে বিলম্ব ঘটে। এবার শ্রাবণের মাঝামাঝি এসে টানা বৃষ্টিতে জমিতে সেচ না দিয়েই রোপণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে খরচও কমে যাবে আশা কৃষকের।
চিরিরবন্দরের নশরতপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রাবণে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় চাষোপযোগী হয়েছে জমি। শঙ্কা কেটে গেছে এবং আমন ধানের চারা রোপণ করছি।’ শিবনগর ইউনিয়নের কৃষক রাশেদুজ্জামান বাপ্পি বলেন, ‘১ একর জমিতে স্বর্ণা-৫ জাতের আমন ধান রোপণ করব। বৃষ্টি না হওয়ায় চিন্তিত ছিলাম। বৃষ্টি হওয়ায় শঙ্কা কেটে গেছে এবং চারা রোপণ শুরু করেছি।’
একই গ্রামের কৃষক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমন চাষ মূলত বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল। জমিতে এখন প্রয়োজনীয় পানি জমেছে, তাই রোপণের উপযোগী হয়ে উঠেছে।’ ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, শুরুর দিকে বৃষ্টি কম হওয়ায় অনেকে রোপণ করতে পারেননি। কিন্তু এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আশা করা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রোপণ শেষ হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ২৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে হয়েছে ২৪৭ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। আগস্টে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৭০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।