মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদের পাড় থেকে প্রতিদিন রাতের আঁধারে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে একটি চক্র। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে পুরো গ্রাম। স্থানীয়রা একাধিকবার প্রশাসনকে জানালেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি অভিযোগ তাদের। শুধু আড়িয়াল খাঁ নয়, কুমার নদ, নিম্ন কুমার, পালরদীর তীরেও একইভাবে মাটি তোলার অভিযোগ রয়েছে। জেলার অন্তত ২০টি স্থানে নদীর মাটি লুট হচ্ছে। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে বাহেরচর কাতলা, রাজারচর, পখিরা, তিন নদীর মুখ, চর কালকিনি, চর হোগলপাতিয়া ও চর ব্রাহ্মন্দী। রাতের আঁধারে ট্রলার ও ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে মাটি তোলা হচ্ছে।
সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষের চর গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান সাইফ বলেন, আমরা বহুবার প্রশাসনকে জানিয়েছি, তবুও মাটি লুট থামানো যায়নি। প্রতিদিন রাতে তারা ট্রলার দিয়ে মাটি নিয়ে যায়। আরেক বাসিন্দা মিন্টু সরদার বলেন, প্রতিদিন রাতেই এখান থেকে মাটি কেটে নিয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি সব নদীগর্ভে চলে যাবে। আমরা এর প্রতিকার চাই। এলাকার ইমাম মাওলানা আলমগীর শিকদার বলেন, ‘মাটি লুটের প্রতিবাদ করায় আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক আফসানা বিলকিস বলেন, আমরা একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। যারা নদীর মাটি কাটছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর পাড় ও তলদেশ থেকে অতিরিক্ত মাটি তোলা হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়। এতে তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন বৃদ্ধি পায় এবং বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। একই সঙ্গে এর প্রভাব পড়ে স্থানীয় জীববৈচিত্র্যে ও কৃষির ওপর। স্থানীয় আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী আবুল হাসান সোহেল বলেন, নদী থেকে মাটি তোলা মানে স্বাভাবিক প্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। এতে নদীর ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ক্রমান্বয়ে ভাঙন বাড়ে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চরাঞ্চলগুলো মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে। মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, নদীর তীরবর্তী এলাকায় নিয়মিত টহল ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা দরকার। অবৈধ মাটি তোলা বন্ধে জরুরিভিত্তিতে আইন প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা খলিল চৌকিদার বলেন, এই নদী আমাদের জীবিকার উৎস ছিল। এখন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন নদীর মাটি কেটে নেওয়ার ফলে আমরা আতঙ্কে আছি।