মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকায় উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তার নিজ এলাকা সাঁথিয়ার মানুষ। এ রায়ে সাঁথিয়া তথা পাবনার মানুষ কলঙ্কমুক্ত হলো বলে জানান তারা। সেইসঙ্গে অবিলম্বে রায় কার্যকর করারও দাবী তাদের। তবে তার নিজ গ্রাম মনমোদপুরের স্বজনরা এই রায়কে রাজনৈতিক হত্যার ষড়যন্ত্র বলে দাবী করেন। রায় বহালের খবর পেয়ে পাবনায় আনন্দ মিছিল, পথসভা ও মিষ্টি বিতরণ হয়েছে।
সাঁথিয়ার ধূলাউড়ী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর বলেন, ‘মতিউর রহমান নিজামী কেবল পাবনার নয়, সারা বাংলাদেশের রাজাকারদের সর্দার হিসেবে কাজ করেছে। তার নির্দেশেই ধূলাউড়ী, ডেমরাসহ পাবনার বিভিন্ন গ্রামে অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অবিলম্বে আমি এই নৃশংস রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবী জানাচ্ছি।’
শহীদ পরিবারের সদস্য সাঁথিয়ার রাজীব হোসেন মামুন বলেন, ‘আমরা কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে আমরা স্বজন হারানোর বিচার পাবো। বার বার এমপি, মন্ত্রী হয়ে এদেশের স্বাধীনতার বুকে এই বদর নেতা বার বার কালিমা লেপন করেছে। বুকের মাঝে চাপা কষ্ট নিয়ে লুকিয়ে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না। আজ আমি গর্বিত। এ কুখ্যাত রাজাকারের আপিলে ফাঁসি বহাল রেখেছেন মহামান্য বিচারক। আমি সরকার, দেশের প্রগতিশীল জনতা ও বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত সবাইকে জানাই কৃতজ্ঞতা।’
নিজামীর নিজ গ্রাম সাঁথিয়ার মনমোদপুর গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘দেশের যেখানেই যাই বাড়ির ঠিকানা বললেই মানুষ বলত রাজাকার নিজামীর দেশের লোক। আজকের এ রায় আমাদের কলঙ্কমুক্ত হবার সুযোগ করে দিল।’
পাবনার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের বিশ্বাস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘খালেদা জিয়া সরকার এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর গাড়িতে লাখো শহীদের রক্তে ভেজা জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে, তাকে মন্ত্রী বানিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা আর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে কালিমা লেপন করেছে। আমরা চাই অবিলম্বে এ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করে পাবনাবাসীকে কলংকমুক্ত করা হোক। সেই সাথে এ কুখ্যাত রাজাকারের লাশ যেন কোনোক্রমেই পাবনার মাটিতে দাফন করা না হয়।’
এ ব্যাপারে পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাবেক সভাপতি গোপাল সান্যাল বলেন, ‘কুখ্যাত এ রাজাকারের শুধু রায় হলেই চলবে না। দ্র’ততার সঙ্গে তার ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।’
রায়ের খবর পাবনায় এসে পৌঁছলে পাবনার মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন।
মিছিলটি শহরের প্রধান পধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে পথসভায় মিলিত হয়। পথসভায় বক্তারা এই রায় দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের দাবী জানান।
তবে নিজামীর গ্রামে বসবাসরত স্বজনরা দাবী করেন, সরকার তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ফাঁসি দিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি একজন ভালো মানুষ বলেই দাবী করেন তার দূর সম্পর্কের ভাতিজা কামাল পাশা। তিনি ওই এলাকার সদ্য সাবেক প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন, এমনকি যে বাড়িতে জায়গীর থেকে লেখাপড়া করতেন সেই বাড়ির লোকজনও কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অথচ মতিউর রহমান নিজামীর আত্মীয় স্বজনরা এখনো কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
সাথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার আব্দুল লতিফ কোনো প্রকার মন্তব্য না করে বলেন, ‘এটা রাষ্ট্রীয় বিচারিক বিষয়।’
এদিকে, রায়ের প্রতিক্রিয়ায় পাবনা জেলা শহরের দই বাজারে একটি ঝটিকা মিছিল বের করলে নিজ এলাকা সাঁথিয়ায় জামায়াত শিবিরের কোনো মিছিল বা সমাবেশ চোখে পড়েনি। রাস্তায় দেখা যায়নি দলটির কোনো নেতাকর্মীকেও। তবে যে কোনো ধরণের নাশকতার চেষ্টা প্রতিহত করার যথেষ্ট প্রস্তুতি আইনশৃংখলা বাহিনীর রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির পরাগ।
বিডি-প্রতিদিন/৬ জানুয়ারি ২০১৬/শরীফ