পরকীয়া প্রেমের অযুহাতে দেবর ও ভাবীকে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে এনে শালিসের নামে লাঠি দিয়ে পেটানোর পর আহত অবস্থায় তাদের মাথা ন্যাড়া করে ছেড়ে দিয়েছে পটুয়াখালীর নব-নির্বাচিত এক ইউপি চেয়ারম্যান। শনিবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে শালিস বৈঠকের নামে এ বর্বরতা চালানো হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক সাধারণ সদস্য, সংরক্ষিত নারী সদস্য, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার, দফাদারসহ শত শত লোকের উপস্থিতিতে মধ্যযুগীয় বর্বরতার ঘটনায় কেউই প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। চেয়াম্যান স্বপন গলাচিপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের সাংসদ আখম জাহাঙ্গির হোসইনের ছোট ভাই। অজ্ঞাত কারনে পুলিশ রাতেই ভিকটিমদের উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে ইসাদি গ্রামের হাবিবুর রহমান রাঢ়ীর স্ত্রী তিন সন্তানের জননী রাবেয়া বেগম ও একই বাড়ির হাবিবের চাচাতো ভাই মিজানুর রহমানকে পরিষদে ধরে আনতে নির্দেশ দেন ওই ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান খালিদুল ইসলাম স্বপন। মামার নির্দেশ পেয়ে চেয়ারম্যানের ভাগ্নে টিপু তার সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে পরিষদ সংলগ্ন রাঢ়ী বাড়ি থেকে তাদেরকে জোর করে তুলে নিয়ে পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখে। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শুরু হয় পরকীয়ার শালিস। আমার ইউনিয়নে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেব না বলে চেয়ারম্যান স্বপন নিজেই লাঠি দিয়ে মিজান ও রাবেয়াকে বেধড়ক পেটায়। এক পর্যায়ে রাবেয়া অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে দু’জনের মাথা ন্যড়া করে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। উপস্থিত সকলকে দম্ভের সাথে চেয়ারম্যান বলেন, কেউ কিছুই দেখেননি, মুখে ক্লুপ এঁটে থাকবেন। পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চেয়ারম্যান স্বপন উপায়ন্ত না পেয়ে থানা পুলিশ দিয়ে মিজান ও রাবেয়াকে থানায় নিয়ে রাতভর আটকে রাখে।
শালিসে উপস্থিত ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব এমএ কুদ্দুস জানান, শালিসের সিদ্ধান্ত নতুন চেয়ারম্যান একাই নিয়েছেন। তার উপর কেউই কথা বলতে সাহস পায়না। পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক থাকতেই পারে সেজন্য আইন রয়েছে। লাঠিপেটা অমানুষিক ও মাথা ন্যাড়া করে দেয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। চেয়ারম্যান নিজের হাতে ওদের পিটিয়েছে। পরে দু’জনের মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের পরই শালিস ডাকায় আমরা না থেকে পারিনি। বার বার নিষেধ করেছি স্বপন সাহেবকে আমার কথা শুনেননি। বয়স কম এবং এমপি সাহেবের ভাই তাই কেউই সাহস করেননি প্রতিবাদ করতে। শত শত লোক উপস্থিত ছিলো ওই সময়।
ঘটনার পর রাতেই রাবেয়া ও মিজান থানায় এসেছে বলে জানান গলাচিপা থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক। পরে আবার তিনি বলেন, রাতে পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় আসামি ধরতে গিয়ে তাদের ধরে এনেছে। অভিযোগ পেয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
ঘটনার সত্যতা জানিয়ে পটুয়াখালীর সহকারী পুলিশ সুপার মো. মঈনুল হক জানান, ভিকটিম দু’জন গলাচিপা থানায় রয়েছে। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে ঘটনা ঘটেছে সেটা মোটেও ঠিক হয়নি। প্রেমের সম্পর্ক থাকতেই পারে, যে কোন ঘটনার জন্য আইনের আওতায় এনে অধরাধের বিচার করা যায়।
এ ব্যাপারে জানতে যুবলীগ সভাপতি ও নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. খালিদুল ইসলাম স্বপনকে ফোন করে পাওয়া যায়নি।
পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের এমপি ও স্বপনের বড় ভাই আখম জাহাঙ্গির হোসাইন বলেন, কাল রাতে ওসি সাহেব বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। যদি এ ধরনের ঘটনা সত্যি ঘটে থাকে তাহলে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/২৭ মার্চ, ২০১৬/মাহবুব