শেরপুরে চাঞ্চল্যকর শিশু রাহাতকে (৮) অপহরণের পর হত্যার দায়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সায়েদুর রহমান খান আট মাস আগের এ মামলায় ৯ কার্যদিবস শেষে এ রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন শেরপুর সদরের বয়ড়া পরাণপুর গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে অপহৃত শিশুর খালু মো. আব্দুল লতিফ (২১), লতিফের বন্ধু একই গ্রামের ফারুক মিয়ার ছেলে রবিন মিয়া (২০) এবং হেরুয়া নিজ পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে মো. আসলাম বাবু (২২)।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২ আগস্ট বিপ্লব-লোপা মেমোরিয়াল স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ও শহরের গৃর্দানারায়নপুর মহল্লার কাঠ ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খোকনের ছেলে রাহাতকে শহরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে তার আপন খালু আব্দুল লতিফ ও তার সহযোগীরা অপহরণ করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে শিশুটিকে তারা জেলার নালিতাবাড়ীর মধুটিলা ইকোপার্ক সংলগ্ন একটি পাহাড়ি টিলায় নিয়ে গলাটিপে হত্যা করে গহীন জঙ্গলে ফেলে দেয়। আসামি লতিফের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ওই পাহাড়ি টিলার জঙ্গল থেকে শিশুটির কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। পরে গ্রেফতার হওয়া আসামি আব্দুল লতিফ, আসলাম বাবু, রবিন মিয়া ও ইমরান হোসেন শিশু রাহাত অপহরণ ও হত্যার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু জানান, গত ২০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে শেরপুরের বহুল আলোচিত এ মামলাটির আজ মঙ্গলবার রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সায়েদুর রহমান খান। মামলা দায়ের করার ৯ কার্যদিবস শেষে রায়ে আসামি আব্দুল লতিফ, আসলাম বাবু, রবিন মিয়াকে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন। অপর আসামি ইমরান হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এর আগে শিশু রাহাত হত্যা মামলার ২৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
মামলার বাদী শিশু রাহাতের বাবা শহিদুল ইসলাম খোকন রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুততম সময়ে দণ্ড কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থানরত আসামি আব্দুল লতিফের স্ত্রী রাহাতের খালা ইতি ফাঁসির দণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/২৯ মার্চ, ২০১৬/সালাহ উদ্দিন/মাহবুব