হাসপাতালই যেন এক মুমূর্ষু রোগী। পুরো ভবনের দেয়ালে বড় বড় ফাটল, যা দিয়ে অনায়াসে দেখা যায় ভেতরের সবকিছু। খসে পড়ছে পলেস্তারা। মহিলা ওয়ার্ডের দরজার পাল্লাটিও ভাঙা। মাথার ওপর জরাজীর্ণ টিন দিয়ে বর্ষা এলেই পড়ে পানি। ইমার্জেন্স কক্ষে সবসময় ঝুলতে থাকে তালা। ছয়জনের বদলে আছেন একজন চিকিৎসক। অন্যান্য পদে থাকা ব্যক্তিরা মাঝেমধ্যে এসে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করেই বিদায় নেন। নেই প্রয়োজনীয় ওষুধ।- এই চিত্র নিয়েই বছরের পর বছর চলছে রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
সরেজমিন দেখা গেছে, ২০১২ সালে নির্মান হওয়া হাসপাতালটির ভবনের ইটের গাঁথুনিও খুলে খুলে পড়ছে। ভূমিকম্প না হলেও যে কোনো মুহূতে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। অন্যদিকে তীব্র সংকটে চিকিৎসা ব্যবস্থাও। অভিযোগ উঠেছে, জুরাছড়ি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয়জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা কাগজেই। একজনমাত্র চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। অন্যান্য পদে কর্মরতদের অনেকেই দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত। আবার কেউ কেউ বদলির তদবির নিয়ে ব্যস্ত। চিকিৎসক-নার্স সংকট ছাড়াও প্রয়োজনীয় ওষুধ-পথ্য পাওয়া যায় না স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুত্বপূর্ণ পদ মেডিসিন কনসালটেন্ট, সার্জারি কনসালটেন্ট, অর্থসার্জারি কনসালটেন্ট, চক্ষু, নাক-কান-গলা, শিশু, এনসথেসিয়া ও প্যাথলজিক্যাল পদগুলোতে দীর্ঘদিন কোনো লোকবল নেই।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে জুরাছড়ি উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কাগজে-কলমে ৫০ শয্যা হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা করলেও বাস্তবে এখনও এটি ১০শয্যায় রয়ে গেছে। তাছাড়া চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকার পাশাপাশি নার্স ও কর্মচারী সংকটও তীব্র হয়ে উঠেছে। সংস্কারের অভাবে বেহাল অবস্থা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনটির। আবাসিক ভবনগুলোর অবস্থা আরো করুণ। অথচ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের নির্মাণ অধিশাখার উপ-সচিব ডা. মো. সাজেদুল হাসানের স্বাক্ষরিত আদেশ মূলে ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ভবন নির্মাণের কথা বলা হলেও তা কাগজেই।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, দায়িত্বরত চিকিৎসক বিভিন্ন কাজে সব সময় আসতে পারেন না। তাই সহকারী ও সেবিকারা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বিপাশ খীসা জানান, জুরাছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৫০ শয্যা থাকার কথা থাকলেও আছে ১০ শয্যা। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহুবার চিঠির মাধ্যমে অবগত করা হয়েছে। কিন্ত এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
জুরাছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান উদয় জয় চাকমা জানান, রাঙামাটি ১০টি উপজেলার মধ্যে জুরাছড়ি উপজেলা খুবই দূর্গম। ইউনিয়নগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থাও তেমন উন্নত না। সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে নামে মাত্র। তাছাড়া কোনো চিকিৎসকও কর্মস্থলে থাকতে চায় না। বিষয়টি রাঙামাটি সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ দেখা যায়নি।
বিডি-প্রতিদিন/১৯ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ