লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের ৫০টি বৈশ্য পরিবারের লোকজন ফতোয়াবাজীর শিকার হয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছে। এই অবৈধ ফতোয়া থেকে মুক্তির জন্য গত ১০ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন জানায় ক্ষতিগ্রস্ত ওই ৫০টি পরিবারের লোকজন।
জানা গেছে, ওই উপজেলার স্থানীয় মহিষখোঁচা বাজার সংলগ্ন এলাকায় দেশ স্বাধীনের আগ থেকেই বসবাস করে আসছে বৈশ্য সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পরিবার। দীর্ঘদিন বসবাসের প্রেক্ষিতে এই এলাকাটি বৈশ্যপাড়া নামে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর থেকে স্থানীয় লোকজন তাদের উপর নানাভাবে অত্যাচার শুরু করে। স্থানীয় বাজারের কোনো চায়ের দোকান বা অন্যান্য কোনো দোকানে বৈশ্য সমপ্রদায়ের লোকজনকে যেতে নানাভাবে বাধা প্রদান করে স্থানীয় লোকজন। তাদেরকে কোনো চায়ের দোকানে চা পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয় না। এছাড়া গ্রামের কিছু টাউট প্রকৃতির লোকজন ওই বৈশ্য সমপ্রদয়ের লোকজনের জমি-জমা স্বল্প দামে কিংবা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক সময় টাকা না দিয়েই দখল করে নেয়। গ্রাম্য টাউট এসব লোকজনের অত্যাচারে দেশ স্বাধীনের পরেও অনেক পরিবার দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যায় এবং অনেকেই দেশের অন্যত্রে চলে গিয়ে বসতি গড়ে তোলে।
সরেজমিনে আজ শুক্রবার গিয়ে জানা যায়, জাতিগত এই ভেদাভেদ স্বাধীনতার পর থেকেই চলে আসছে। তাদের এই অত্যাচারে অনেক পরিবার দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। গ্রাম্যটাউট এসব লোজকনের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রায় ১০ বছর আগে এই বৈশ্য সমপ্রদায়ের ক্ষিতিশ চন্দ্র রায় স্বল্প দামে জমি বিক্রি করে পরিবারের ৬ জন সদস্য নিয়ে ভারতে চলে যায়। একইভাবে স্ব-পরিবারে অতুল চন্দ্র রায়, বাবু চন্দ্র রায় ও রেজোনাস দাস নাম মাত্র মূল্যে ভিটা-বাড়ি বিক্রি করে ভারতে চলে যায়। এছাড়া হরসান্দ্র চন্দ্র, কানে্তশ্বর রায় ও ফুল কিশোর রায়সহ আরো অনেকে বসত-বাড়ি বিক্রি করে পার্শ্ববর্তী অন্য এলাকায় গিয়ে বসতি গড়ে তুলেছে।
বৈশ্য সমপ্রদয়ের অতুল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার এক ছেলে এডভোকেট, এক ছেলে বিসিএস পরীক্ষার্থী এবং মেয়ে সরকারি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা। আমার পরিবার শিক্ষিত পরিবার। কিন্তু অপরাধ একটাই যে, আমরা শুকর পুষি। শুধু এজন্য আমাদের সঙ্গে কেউ কথা বলে না, বন্ধুত্ব করে না। আমাদের ছেলে- মেয়েদের সঙ্গে তাদের কোনো ছেলে মেয়েদের মিশতে দেয়া হয় না। গ্রামের লোকজন আমাদের বাজারের কোনো চায়ের দোকানে বসতে দেয় না। আমাদের সঙ্গে কেউ আত্মীয় করতে চাইলে তাতেও বাধা দেয় লোকজন।
আদিতমারি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জহুরুল ইসলাম আজ সকালে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বৈশ্য সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার ও অনাচার দীর্ঘদিনের। বিষয়টি নিরসনের জন্য আগামী সপ্তাহে গণ মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/২২ এপ্রিল ২০১৬/শরীফ