তিন যুগ ধরে চরম কষ্টের জীবন যাপন করছেন রহম আলী (৪৯)। তাঁর জীবনের ৩৬ বছর প্রায় নিথর, নিস্তেজ অবস্থায় কেটে গেছে তিন ফুট লম্বা কাঠের একটি পিঁড়িতে শুয়ে। তাঁর হাত-পা কাজ করে না। পা দুটি বাঁকা হতে হতে পেটের সঙ্গে লেগে গেছে। প্রথম দেখলেই মনে প্রশ্ন জাগবে, রহম আলী জীবিত, নাকি মৃত? তাঁর প্রায় পুরো শরীর অচল হলেও বেশ স্পষ্ট করেই কথাবার্তা বলতে পারেন তিনি।
কুড়িগ্রামের রৌমারী-রাজীবপুর সড়কের চাকতাবাড়ী নামক স্থানে সড়কের একপাশে কাঠের পিঁড়িতে শোয়া অবস্থা দেখা যায় রহম আলীকে। সাধারণ মানুষের মতো তাঁরও আবেগ-অনুভূতি আছে, আছে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। মুক্তমনে চলাফেরা আর স্ত্রী-সন্তানের প্রত্যাশাও ছিল তাঁর। কিন্তু কিশোর বয়সেই তাঁর সব স্বপ্ন কেড়ে নেয় জ্বর। বয়স ৪৯ বছর পার হতে চলল, কিন্তু সুন্দর পৃথিবীর কিছুই উপভোগ করা হলো না তাঁর।
রৌমারী উপজেলার চাকতাবাড়ী গ্রামে দরিদ্র ঘরে জন্ম রহম আলীর। তাঁর বাবা রহমত মোল্লা অনেক আগেই মারা গেছেন। মা রহিমা বেগম মারা যান দুই বছর আগে। রহম আলীর দুই বোন সোনাবান বেগম (৩৬) ও রওশনারা বেগম (৩২)। যৌতুক দিতে না পারায় স্বামীর ঘর ছাড়তে হয় তাঁদের।
সোনাবান বেগম বলেন, ‘ভাইর বয়স যখন ১২ বছর তখন তাঁর জ্বর হয়ছিল। মাইনসে কইত বাসাত (বাতাস) নাগছে। আবার কেউ কেউ কইছিল টাইফয়েড জ্বর। মেলা কবিরাজির চিকিৎসা, ঝাঁড়ফুক করা হয়েছে কিন্তু ভালা অয়নি। দিনে দিনে তার হাত-পা অবশ হতে থাকে। চলাফেরাও বন্ধ হয়ে যায়। বিছানায় থাকতে থাকতে তার এ অবস্থা হয়েছে।’
চাকতাবাড়ী এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘রহম আলী ও তাঁর দুই বোনের অভাব-অনটনের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। এ কারণে রহম আলীকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা আর তাঁর এক বোনকে ভিজিডি তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যখন সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা আসে আমরা চেষ্টা করি তাঁদের দেওয়ার জন্য।’
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ মে, ২০১৬/ আফরোজ