অভাব সর্বক্ষণ পিছু তাড়া করলেও মা-বাবার আশা ছিল মেধাবী মরিয়মকে লেখাপড়া শিখিয়ে ডাক্তার বানাবেন। মেয়েও মা-বাবার আশা বাস্তবে রূপ দিতে শত কষ্ট করেও হারিকেনের মিটিমিটি আলোয় লেখাপড়া চালিয়ে ৫ম ও অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫েপেয়েছিল। এ বছর সে দশম শ্রেণির ছাত্রী। কিন্তু মালেক নামে এক বখাটে তার সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। তার হাঁসুয়ার আঘাতে মরিয়মের হাত এখন অকোজো। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে বর্তমানে সে কষ্টের জীবন শুরু করেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৭ মে সকালে সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিযনের বেহুলা অরুণবাড়ী গ্রামের দিনমজুর মকবুল হোসেনের মেয়ে ও মহিপুর এসএএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মরিয়মসহ তার চার বান্ধবী শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট টিউশনের নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। এমন সময় বখাটে মালেক তাদের ৪ জনকেই কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এতে তার বান্ধবী কনিকা রানী দাস মারা যায় এবং মরিয়মের ডানহাত দেহ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে চিকিৎসার জন্য ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার হাতের অস্ত্রোপচার করে কোন রকমে জোড়া লাগানো হয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সোমবার বাড়ি ফিরেছে সে।
এর আগে মরিয়মের অপর দুই আহত বান্ধবী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু মরিয়ম কখন ভালো হবে আর কখন সে আবার স্কুল যাবে এনিয়ে দুশ্চিন্তায় কাটছে না। সামনে তার এসএসসি পরীক্ষা।
কথা হয় মরিয়মের সাথে। সে জানালো তার মতো যেন আর কোন মেয়ে বখাটের শিকার হয়ে তার জীবন কষ্টের মধ্যে না পড়ে। এজন্য বখাটে মালেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। মরিয়মের মা শরিফা বেগম জানান, মেয়ের চিকিৎসা চালাতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আরও একমাস পর আবার মেয়েকে নিয়ে ঢাকা যেতে হবে চিকিৎসার জন্য। তাই সকলের সহায়তা প্রয়োজন। মরিয়মের পিতা মোকবুল হোসেন জানান, অরুণবাড়ী গ্রামে জঙ্গলের মধ্যে অন্যের জমিতে ঘর বানিয়ে দিনমজুরি করে দিন চলে। তাই শত কষ্ট করে হলেও মেয়েকে ডাক্তার বানাতে এখনও দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মরিয়মের পিতা মকবুল হোসেন।
এদিকে মরিয়মের বিদ্যাপীঠ মহিপুর এসএএম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সফিকুল আলম বলেন, মেধাবী ছাত্রী মরিয়ম যেন সুস্থ হয়ে আবার বিদ্যালয়ে ফিরতে পারে এজন্য দরিদ্র পরিবারটির জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি বখাটে মালেকের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই ঘটনায় তখন পার্শ্ববর্তী দিয়াড় ধাইনগর গ্রামের বখাটে মালেককে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা এবং তার বিচারের দাবিতে উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু ঘটনার ৪ মাস পার হলেও মেডিকেল রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় মামলার অভিযোগপত্র দিতে দেরি হচ্ছে বলে জানান সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ ওয়ারেছ আলী।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৪ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ