সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার জেরে সন্ত্রাসী হামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে তাড়াশ উপজেলা পরিষদ ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে, আইনশৃংখলা সভায় এমপির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখায় উপজেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এমপির সমর্থকরা। অন্যদিকে,উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বজনরা হামলার জন্য এমপিকে দায়ী করলেও সাংসদ আমজাদ হোসেন মিলন বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সংসদ সদস্য ম. ম. আমজাদ হোসেন মিলনের সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হকের রাজনৈতিক বিরোধ চলছিল। অঘোষিতভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগ দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মাঠে-ঘাটে দু'পক্ষই একে অপরকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করে। এ অবস্থায় রবিবার দুপুরে মাসিক আইনশৃংখলা সমন্বয় সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হকের সমর্থক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল সেখ ও বারুহাস ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন তাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি হওয়ায় এমপি ও ওসির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। এ সময় ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বিদ্যুত প্রতিবাদ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন মিলন সভা ত্যাগ করে নিজ বাসায় চলে যান। এরপরই উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হক উপজেলার আটটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক চলাকালে একদল সন্ত্রাসী চেয়ারম্যানের রুমে হামলা চালিয়ে সকলকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে আহত অবস্থায় সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, সংবাদ পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য্য ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক হাসপাতালে ছুটে আসেন। অন্যদিকে, এমপিকে কটাক্ত ও তার বিরুদ্ধে অপমানজনক বক্তব্য রাখায় এমপির সমর্থকরা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
তাড়াশ সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল সেখ ও বারুহাস ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন জানান, এমপির মদদেই তাদের দু'জনের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হয়েছে। এ বিষয়টি আইনশৃংখলা মিটিংয়ে উত্থাপন হলে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। মিটিং শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হক তার নিজ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যানগণকে সাথে নিয়ে বৈঠক করছিলেন। এ সময় ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বিদ্যুতের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়।
তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটিএম আমিনুল ইসলাম জানান, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান বাবুল সেখ বিভিন্ন সময়ের পাশাপাশি মাসিক মিটিংয়েও এমপির বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। এ নিয়ে সভায় কথা কাটাকাটি হয়। পরে এমপি সভা ত্যাগ করে চলে যান। এমপি চলে যাবার কিছুক্ষণ পরেই মারপিটের ঘটনা ঘটে। তবে দোষীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হবে বলেও ওসি জানান।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য গাজী ম.ম. আমজাদ হোসেন মিলন জানান, সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল ও বারুহাস ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় জিডি হওয়ায় মাসিক সমন্বয় সভায় ওসিসহ তাকে জড়িয়ে অকথ্য ভাষায় বক্তব্য রাখেন। এসময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ বিষয়টির প্রতিবাদ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করা হয়। এ অবস্থায় তিনি সমন্বয় সভা ত্যাগ করে চলে আসেন। পরে শুনেছি আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে এমন খবর শুনে স্থানীয় জনতা উত্তেজিত উঠেছিল। তবে কে বা কারা হামলা করেছে এটি আমার জানা নেই।
এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য্য ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, বিষয়টি দলীয় ফোরামে আলোচনার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে।
সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আকরামুজ্জামান জানান, চেয়ারম্যানের অবস্থায় আশঙ্কাজনক। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় প্রেরণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ/১