শরীয়তপুরে ছাত্রলীগের এক নেতার থাপ্পরে সেলিম মাতুব্বর নামে এক পুলিশ সদস্যের কানের পর্দা ফেটে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম আক্তার হোসেন। তিনি শরীয়তপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
শরীয়তপুর সদর থানা সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন মঙ্গলবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের কর্মকর্তা দেবা শিষ সাহার কক্ষে যান। এ সময় তার সাথে শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তারা চিকিৎসা কর্মকর্তার কাছে হোসেন খন্দকার নামে এক রোগীর আঘাতের চিকিৎসা জনিত সনদপত্র দাবি করেন। এসময় রোগী ছাড়া সনদপত্র দিতে অপরগতা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।
এরপর আক্তার ওই কর্মকর্তাকে গালাগাল দিয়ে অপদস্ত করতে থাকেন। সেখানে তখন চিকিৎসা নিতে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের নায়েক সেলিম মাতুব্বর। চিকিৎককে কেন এভাবে অপদস্ত করা হচ্ছে তা জানতে চান ওই পুলিশ সদস্য। তখন আক্তার উত্তেজিত হয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে মারধর করতে থাকে। এসময় তার থাপ্পরে পুলিশ সদস্যর ডান কানের পর্দা ফেটে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়।
কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমরান খান বলেন, আঘাতের কারণে ওই ব্যক্তির কানের পর্দা ফেটে গেছে। তার কান দিয়ে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। তার আঘাতটি গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
খবর পেয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে দেখতে হাসপাতালে আসেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান, পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন, সহকারি পুলিশ সুপার তানভির হাসান। তারা হাসপাতালের ত্বত্তাবধায়ক মশিউর রহমান ও কর্মরত চিকিৎসকদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
এদিকে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করতে পুলিশ তার মামা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যন আলমগীর হোসেন হাওলাদারের বাস ভবন ও ক্লিনিকে অভিযান চালায়। এ সময় আক্তারের কক্ষ থেকে একটি চাপাতি উদ্ধার করে পুলিশ। দুপুরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন হাওলাদারের মালিকানাধীন হাওলাদার ক্লিনিকে অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নীতি মালা ও আইন লঙ্ঘন করে ক্লিনিক চালানোর অভিযোগে ভ্রম্যমাণ আদালত মালামাল বাজেয়াপ্ত করে ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেন। এ সময় ক্লিনিকে ভর্তি থাকা রোগীদের সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন মশিউর রহমান বলেন, আক্তার হোসেন প্রায়ই হাসপাতালে চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্যায় ভাবে চিকিৎসা সনদ নিতে চায়। কেউ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের উপর চরাও হয়। এ কারণে সে মঙ্গলবার চিকিৎসক দেবা শিষ সাহাকে অপদস্ত করে। এর প্রতিবাদ করলে একজন পুলিশ সদস্যকে থাপ্পর দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন হাওলাদার বলেন, ঘটনার সময় আমি ডাক্তারের কক্ষে অবস্থান করছিলাম। হৈচৈ শুনে বাহিরে এসে দেখি আক্তার আর এক ব্যক্তি হাতাহাতি করছে। আমি তাদের নিবৃত করি। ওই ব্যক্তি নিজেকে পুলিশ পরিচয় দেয়ার পর আমি আক্তারকে মারধর করে তারিয়ে দেই এবং পুলিশ সদস্যর কাছে ক্ষমা চাই। এরপরও পুলিশ আমার বাড়ি তল্লাশি করেছে। ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আক্তার পলাতক রয়েছে। তার মুঠোফোন বন্ধ থাকা যোগাযোগকরা সম্ভব হয়নি। শরীয়তপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, চিকিৎসককে অপদস্ত ও পুলিশ সদস্যকে মার ধরের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বিডি প্রতিদিন/১ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল-০৯