কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় রেজিয়া খাতুন নামের এক সুবিধাভোগীর নামে বরাদ্দকৃত ১১ মাসের চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দুস্থ সুবিধাভোগী মৃত্যুবরণ করার পর গত বছর জুলাই থেকে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১৬ মাসের মধ্যে ৫ মাসের বরাদ্দকৃত চাল নিহতের সন্তানদের মাঝে বিতরণ করা হলেও বাকি ১১ মাসের বরাদ্দকৃত ৩৩০ কেজি চাল আত্মসাৎ করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও পরিষদের সচিব।
গত ১৩ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এমন অভিযোগ করেছেন ওই সুবিধাভোগীর বড় ভাই মোকছেদ আলী।
অভিযোগে জানা গেছে, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডভুক্ত চরগয়টা পাড়া গ্রামের আফজাল হোসেন মন্ডলের স্ত্রী রেজিয়া খাতুনের নামে গত ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ভিজিডি কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত করা যায় কার্ডনং-২৪০ এবং মাষ্টাররোলের ক্রমকিনং ১৫৭। রেজিয়া খাতুনকে তার স্বামী আফজাল হোসেন খুন করে গত বছরের ২৮ জুলাই রাতে। এ খুনের মামলায় আফজাল জেল হাজত থেকে জামিনে মুক্ত হয়। তাদের ঘরে দুই অবুঝ মেয়ে সন্তান রয়েছে। মা খুন ও বাবা জেলে যাওয়ার পর দুই সন্তান অসহায় হয়ে পড়ে। এই সময়ে অবুঝ দুই সন্তান তাদের মায়ের নামের ভিজিডির চাল তুলতে গেলে তাদেরকে দেয়া হয়নি। কোনো উপায় না পেয়ে মুক্তি খাতুন ও লিলি আক্তার নামের দুই শিশু ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে। এ অবস্থায় ইউপি মেম্বার নুরমোহাম্মদ চেয়ারম্যান ও সচিবকে অনেক অনুরোধ করে অবুঝ ওই দুই শিশুকে ৫ মাসের চাল পাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
অভিযোগকারী মোকছেদ আলী বলেন, ‘আমি অবুঝ দুই শিশুকে নিয়ে চেয়ারম্যান ও সচিবের কাছে গেছি। তারপরও রেজিয়া খাতুনের নামের বরাদ্দকৃত চাল দেয়নি। অথচ যখন দেখলাম যে মৃত্যু রেজিয়া খাতুনের নামের প্রতিমাসের চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে আসছেন চেয়ারম্যান শামসুল হক ও পরিষদের সচিব শ্যামল চন্দ্র বর্মন। এরপর আমি বাদি হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বলেন, 'চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ দেয়ার পর তিনি ওই ১১ মাসের ৩৩০ কেজি চাল বাজার থেকে কিনে পরিষদের গুদামে রেখে দিয়েছেন।'
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শ্যামল চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘এগুলো আমাকে বলে লাভ নেই। যা বলার চেয়ারম্যান সাহেবকে বলুন। আমি এসবের কিছুই জানি না।’
তবে ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা আমি আগে জানতাম না যে মৃত্যু দুস্থের নামের বরাদ্দ চাল প্রতি মাসেই উত্তোলন করা হয়েছে। এটা সচিব সাহেব করেছে। আমি বিষয়টি জানার ওই সুবিধাভোগীর দুই শিশুকে একাধিকবার ডেকে পাঠিয়েছি চাল নেয়ার জন্য। তার ১১ মাসের বরাদ্দ সম্পূর্ণ চাল আমার গুদামে রয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পরই ওই চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মৃত্যু রেজিয়া খাতুনের নামের চাল তার দুই শিশু সন্তানের বিতরণের জন্য।’
বিডি-প্রতিদিন/ ২৭ নভেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ