পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত ‘বাংলা টয়লেট’। গ্রামবাংলার ঐাতহ্যকে ধারণ করে এ অঞ্চলে স্যানিটেশনে উন্নতির পাশাপাশি মলবর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে সবজি চাষসহ টেকসই, দীর্ঘস্থায়ী, পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই এ ‘বাংলা টয়লেট’।
অস্ট্রেলিয়ার হেল্থ হেভিটেড-এর মৃত পল ফলেরসের ডিজাইন নিয়ে দিনাজপুরের অজিত রায় স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন বিশেষ ধরনের এ বাংলা টয়লেট।
বাংলা টয়লেটের একটি গোসলখানা আরেকটি সংযুক্ত ঘর ল্যাট্রিন। এ টয়লেটে টিউবওয়েলের পানি ছাড়াও টয়লেট ছাদে বৃষ্টির পানি ধারণ করে ব্যবহারের ব্যবস্থা রয়েছে। বৃষ্টির পানি ধারণের বেশি হলে বাইপাশ হয়ে নির্গত হওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এ টয়লেটে সার্বক্ষণিক আলো-বাতাস পাওয়া যায়। কোন দুর্গন্ধ হয় না। বাংলা টয়লেটের বর্জ্যসহ পানি বিশেষ ব্যবস্থায় প্রতিদিনই নির্গত হচ্ছে পার্শ্ববর্তী সবজি বাগানে। যা সবজি চাষের কাজে লাগছে। সবজি চাষ ভাল হয়। বাড়ির পার্শ্ববর্তী সবজি চাষকে কেন্দ্র করেই এ টয়লেট। এই বাংলা টয়লেটের স্থায়িত্ব কমপক্ষে ৫০ বছর।
দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন গ্রামে বিশেষভাবে নির্মিত এসব টয়লেট তৈরি করেছেন নিরাপদ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক অজিত রায়। এসব টয়লেট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি, ইট, প্রক্রিয়াজাতকরন বাশ, নিজস্ব তৈরি টালি। টয়লেট নির্মাণের বেশিরভাগ খরচ বহন করে বেসরকারি সংস্থা নিরাপদ বাংলাদেশ।
দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউপির সুন্দরবন গ্রামের বাংককালি বাজার এলাকায় জোতিস চন্দ্র রায়, নয়াপাড়ার খগিন্দ্র নাথ, সরকার পাড়ার সত্যন্দ্রনাথ রায়, নুনসা পাড়ার আমিনুল ইসলাম, রহমানশাহ পাড়ার শহিদুল ইসলাম, আলামুদ্দিন শাহপাড়ার আব্দুর রহিম, হেমন্ত ডাক্তারপাড়ার রবীন্দ্রনাথ, ডাঙ্গাপাড়ার নীরঞ্জন রায়ের বাড়িতে এ বাংলা টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।
এসব তৈরি নিয়ে গবেষণা করেন অজিত রায়। তার গবেষণায় দাবি করা হয়, পরিবেশবান্ধব টেকসই মজবুত, দীর্ঘস্থায়ী এ বাংলা টয়লেট যা বন্যায়, বৃষ্টির পানিতে কোনরকম ক্ষতির সম্ভাবনা নাই। অজিত রায় জানান, এসব কাজে ব্যবহৃত বাঁশগুলোকে বরাক-বরাক (বরিক পাওডার ও বরাক সার সমন্বয়ে) দিয়ে টেকসই করা হয় অথবা বাঁশগুলোকে ৩ মাস পানিতে ভিজিয়ে তারপর শুকনা করে নেয়া হয় যাতে ঘুণে না ধরে। এরপরে বাশ ব্যবহার করা হয়।
দিনাজপুর সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউপির হরিপদ রায়ের পুত্র অজিত রায় জানান, স্থাপত্বের ছোয়া দিয়ে নির্মিত পরীক্ষামূলক ‘বাংলা টয়লেট’ আমরা দু’ধরনের করে থাকি। এর একটি গোসলখানাসহ ল্যাট্রিন, আরেকটি ওয়াই কানেকশন ল্যাট্রিন। এ গ্রামের ৮জনের বাড়ীতে গোসলখানাসহ ল্যাট্রিন বা বাংলা টয়লেট তৈরী করে দেয়া হয়েছে। এসবের খরচে ১০-১২ হাজার টাকা সাধারণ মানুষ দিলেও এর খরচ হয়েছে এক লাখ টাকা। যার বেশিরভাগ খরচ বহন করেছে নিরাপদ বাংলাদেশ। আর দরিদ্র পরিবারের জন্য ওয়াই কানেকশন ল্যাট্রিন তৈরি করতে মাত্র ৩ হাজার টাকা নিয়ে বাকিটা সংস্থা বহন করে। এটার খরচ পড়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এ ধরনের ওয়াই কানেকশনের বাংলা টয়লেট এ পর্যন্ত ৬০টি তৈরি করে দেয়া হয়েছে এবং ১১টি তৈরির পথে রয়েছে। এটার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
এ অঞ্চলের স্যানিটেশনে উন্নতির পাশাপাশি বর্জ্যকে কাজে লাগানোসহ টেকসই, দীর্ঘস্থায়ী, পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই এ ‘বাংলা টয়লেট’।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ