প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’ গতকাল রাজধানীর বীরউত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসস ও বাংলা নিউজ
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা এমন বিশ্বে বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। হয়তো গুজব যে আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। যেখানে যুদ্ধের প্রস্তুতি না রাখাটা আত্মঘাতী। তিনি নিজে ‘যুদ্ধবিরোধী মানুষ’ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘অনেকের মতো আমিও যুদ্ধবিরোধী মানুষ। পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক এটা আমরা কামনা করি না। ’ তিনি বলেন, ‘কাজেই যুদ্ধপ্রস্তুতি সম্পর্কেও একটা ঘোরতর আপত্তি। কিন্তু আমরা এমন বিশ্বে বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। তো সেখানে প্রস্তুতি না নিয়ে থাকাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ‘কাজেই এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী এবং প্রস্তুতি নিতে হলে আধা-আধি প্রস্তুতি নেওয়ার কোনো জায়গা নাই। বিগত সরকারের যথেচ্ছাচারের কারণে যা ছিল তাও লুটপাট হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সামগ্রিক স্ট্যাটেজি ঠিক করতে হবে। শান্তির দিকে আমাদের হাত বাড়িয়ে রাখতে হবে সব সময়। কিন্তু প্রস্তুতিটাও থাকতে হবে।
দেশপ্রেম ও পেশাদারি আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূলভিত্তি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বিমানবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সকল সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ।’ তিনি বলেন, ‘বিমানবাহিনীতে ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার পরিবহন বিমান, রাডার সংযোজনের জন্য সরকার বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে।’
এর আগে বিমানঘাঁটিতে এসে পৌঁছালে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
বিমানবাহিনীর বার্ষিক মহড়া আকাশ বিজয় অনুষ্ঠিত : আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বার্ষিক মহড়া ‘আকাশ বিজয়-২০২৫’-এর চূড়ান্ত সমন্বিত মহড়া গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে বিমানবাহিনী ঘাঁটি বীরউত্তম এ কে খন্দকার, কুর্মিটোলায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে মহড়াটি অবলোকন করেন। মহড়া শেষে তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন প্রধান উপদেষ্টাকে তাঁর উপস্থিতির মাধ্যমে বাহিনীর সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি ও অনুপ্রাণিত করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি ক্রেস্ট হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে সরকারের উপদেষ্টাম লী, সেনা ও নৌবাহিনী প্রধান, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং দেশের অন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সেনাবাহিনী নির্মিত ঘর হস্তান্তর করলেন প্রধান উপদেষ্টা : গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত ঘর হস্তান্তর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঘর হস্তান্তর করেন।
ঘরগুলো নির্মাণে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল হতে প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৩০০টি ঘর নির্মাণে প্রায় ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যন্ত পরিশ্রম ও দক্ষতার সঙ্গে গৃহগুলোর নির্মাণ কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। প্রকল্পের কাজ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি ছোট প্রকল্প। ৩০০ ঘর নির্মাণ, কিন্তু এর মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ করার যে দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করলাম তা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘ভবিষ্যতেও এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা পালন করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকবে।’
তিনি জানান, ‘প্রকল্পের আওতায় ২৯৮টি ঘর ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় দুটি ঘর নির্মাণ করা যায়নি, সেগুলো খুব শিগগিরই নির্মাণ হয়ে যাবে।’
গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী।