দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক, জেসিএক্স গ্রুপের কর্ণধার ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল বলেছেন, দেশের ব্যবসাবাণিজ্য চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, বিনিয়োগ থমকে গেছে। অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক মানুষ বেকার হয়েছে। অনেক শ্রমিক কষ্টে আছে। সরকার একদিকে বিদেশি বিনিয়োগে মনোযোগ দিচ্ছে, অন্যদিকে দেশের উদ্যোক্তাদের সংকট নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এতে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য বড় ধরনের চাপে পড়েছে। এ অবস্থায় শিল্প বাঁচাতে ও শ্রমিকের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেসিএক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, ব্যাংক ঋণের ১৫-১৬ শতাংশ সুদ দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং বড় ব্যবসায়ীদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, উৎপাদন খাতে উচ্চ সুদের হার মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে, ফলে মুনাফা কমছে এবং অনেক ব্যবসায়ী লোকসানে পড়েছে। দেশের ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভালো না থাকলে লাখ লাখ শ্রমিক ভালো থাকবে না। দেশের শ্রমজীবী মানুষকে ভালো রাখতে হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বেকারত্ব কমাতে হবে। এর জন্য ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের ভালো রাখতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় আবাসন খাত এখন চরম সংকটে। প্লট-ফ্ল্যাটের বিক্রি কমেছে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। মানুষের হাতে টাকা না থাকায় কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। রড-সিমেন্ট ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। সিরামিক, টাইলস, পাইপ ফিটিংস ও স্যানিটারি শিল্পের উৎপাদন কমায় স্থবির হয়ে পড়েছে আবাসন খাতের সঙ্গে যুক্ত ৪৫০টি উপ খাত। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান।
ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) উদ্যোগ প্রশংসনীয়; তবে অভ্যন্তরীণ সমস্যাও সমাধান জরুরি। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছে, যার লক্ষ্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ, যা বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত। তবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে শক্তিশালী করতে হলে কেবল বিদেশি বিনিয়োগের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে তাদের সমস্যাগুলো শোনার মাধ্যমে কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে পারে বলে আমি আশা করি। তিনি আরও বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের কথা না শোনে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান না করে, তাহলে দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হবে না, বেকারত্ব বাড়বে। ঋণের সুদহার এবং জ্বালানি সংকট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা আরও সংকটে পড়বেন। কারণ উৎপাদন খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় অনেক শিল্প-কারখানা বর্তমানে অর্ধেকেরও কম সময়ে চালু থাকছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের রপ্তানি খাতে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নইলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে না বরং বেকারত্ব বাড়বে, যা পুরো দেশকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকটে ফেলতে পারে। তাই ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক, সরকারের উচিত দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। শুধু বিদেশি বিনিয়োগে মনোযোগী হওয়া নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকট সমাধানে প্রয়োজন জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ। ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং তাদের সমস্যা সমাধান করা না হলে, দেশের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদি স্থবিরতার মধ্যে পড়ে যেতে পারে।