ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলার হামিরদী ও মানিকদহ ইউনিয়নবাসীর মধ্যে সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার সকালে দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বেশকিছুটা সময় সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ ছিল। দফায় দফায় চলা এ সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ১৫৪ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ৬ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা ১১টার দিকে মানিকদহ ইউনিয়নের নবম শ্রেণির স্কুল ছাত্র সাজ্জাদ শরীফকে মারাত্বক ভাবে কুপিয়ে আহত করে হামিরদী ইউনিয়নের বাদল মাতুব্বর, ইমান তালুকদারসহ কয়েকজন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সন্ধ্যায় মানিকদহ ইউনিয়নের বিক্ষুব্দ লোকজন পুখুরিয়া বাজারে গিয়ে হামিরদী ইউনিয়নের ব্যবসায়ীদের দোকান পাট বন্ধ করে চলে যেতে বলেন। সেসময় হামিরদী ইউনিয়নের ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে চলে যায়। পরবর্তীতে সন্ধ্যা ৭টার দিকে হামিরদী ইউনিয়নের শতাধিক লোকজন এসে পুখুরিয়া বাজারে হামলা করে মানিকদহ ইউনিয়নের কয়েকজন ব্যবসায়ীর দোকান ভাঙচুর করে। এ নিয়ে রাত থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করে। হামিরদী ইউনিয়নের লোকজন রাতভর মাইকিং করে লোকজন জড়ো করে। মঙ্গলবার সকাল থেকে উভয় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুখুরিয়া বাজারের দুপাশে অবস্থান নেয়। সকাল ৭টার দিকে উভয় পক্ষ একে অপরের উপর হামলা চালায়। বেশ কয়েকদফা পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। আজ বেলা ১১টার দিকে সংঘর্ষের কারণে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে কিছুটা সময় সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এসময় বিক্ষুব্দ লোকজন একটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে ভাংগা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপর চড়াও হয় হামলাকারীরা। হামলা চলাকালীন সময়ে পুখুরিয়া বাজার ও আশাপাশের বেশ কয়েকটি দোকান-বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়। দফায় দফায় চলা এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। এদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশংকাজনক। বাকি আহতদের ভাংগা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়েছে।
ভাংগা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে ফরিদপুর থেকে ১ প্লাটুর্ন পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে যায়। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ১৫৪ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও ৬ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। পরে উভয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে পুলিশ লোকজনকে সরিয়ে দেয়। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে কয়েক একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও উভয় ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছে।
মানিকদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ থামাতে তিনি চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তবে তার ইউনিয়নের লোকজনকে তিনি শান্ত থাকতে বলেছেন।
হামিরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামছুল আলম রাসেল জানান, বিক্ষুব্দ গ্রামবাসী একজোট হয়ে হামলা চালায়। হামলা ও পাল্টা হামলায় বেশকিছু দোকানপাট ও বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। এখনো উত্তেজনা চলছে। তবে প্রশাসনের সহায়তায় সকলকে শান্ত থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাংগা সার্কেল) মো. রবিউল ইসলাম জানান, সংঘর্ষের সময় পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আইন শৃংখলার স্বার্থে পুলিশ যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার