দুই সেচ স্কীমের দ্বন্ধের কারণে শতাধিক কৃষকের ৩০ একর জমির ফসল নষ্ট হতে চলেছে। দ্বন্ধের জের দরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে পানি সেচ স্কীমের আওতায় শ্যালোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়নের মাশিমপুর চালুঞ্জা গ্রামের মন্ডল পাড়ায় এঘটনাটির সমাধান না হওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া স্কীমের আওতায় ৩০ একর জমির ফসল এখন ক্ষতির মুখে পড়েছে। ওই এলাকার কৃষকরা বালতিতে করে জমিতে পানি সেচ দিতে শুরু করেছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে বিধি মোতাবেক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
জানা যায়, বগুড়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ থেকে অভীর নলকূপের সেচ সংযোগ নেয় মাশিমপুর চালুঞ্জা মন্ডল পাড়ার আজিমদ্দিনের ছেলে জহুরুল ইসলাম। কিন্তু পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় পল্লীবিদ্যুতের নির্ধারিত দুরত্বে প্রায় ১৫ ফুট গভীর গর্ত করেও শ্যলোতে পানি উঠছিল না। নিরুপায় হয়ে স্কীম মালিক জহুরুল ইসলাম প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে পাশের আরেকটি জমিতে নলকূপ স্থাপন করে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন। তার স্কীমের আওতায় প্রায় ৩০ একর জমির অধিকাংশ বোরো ধান রোপন করা হয়েছে। এছাড়া কেউ কেউ বেগুন, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, করল্লা, পটল সহ বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করেছেন।
লুৎফর রহমান, মমতাজ উদ্দিন, সানোয়ার হোসেন সহ জহুরুল ইসলামের স্কীমের আওতাভূক্ত বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের কারণে বিগত ৮ দিন যাবত পানি সেচ বন্ধ আছে। এতে বোরো ধান গাছ গুলো মরে যেতে শুরু করেছে। কেউ কেউ পাশের একটি পুকুর থেকে বালতিতে করে পানি এনে জমিতে দিয়ে ধান গাছ বেঁচে রাখার চেষ্টা করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কিছু দিনের মধ্যেই উঠতি বোরো ধানসহ সবজি জাতীয় ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।
স্কীম মালিক জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত ডিজেল চালিত শ্যালো দিয়ে পানি সেচ দিয়েছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ আসার পর স্কীমের পরিকল্পনা তৈরি করে বিগত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করেন। এর এক বছর পর সংযোগ পান। সংযোগের পর পানি না উঠলে পাশের জমিতে শ্যালো বসিয়ে সেচ দিতে থাকেন জহুরুল ইসলাম। সেটিও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্ধারিত দূরত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। সেচ দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাধ সাধেন পাশের প্রায় ২ হাজার ফুট দুরত্বে থাকা গভীর নলকূপের মালিক রফিকুল ইসলাম। তার প্ররোচনায় গত ২ মার্চ দুপুরে বিনা নোটীশে হঠাৎ করেই তার সেচ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেয় বগুড়া পল্লীবিদ্যুৎ সমতি-১ এর কর্মীরা। ফলে বিগত ৮ দিন যাবত সেচ কার্যক্রম বন্ধ আছে। উঠতি ফসল গুলো মরে যেতে শুরু করেছে। কৃষকদের দুর্ভোগ-দুর্দশনার কথা বিবেচনা পুন:সংযোগ দিয়ে মরে যাওয়ার হাত থেকে বোরো ধান গুলো রক্ষায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাছে আবেদন জানিয়েছেন স্কীমের আওতাভুক্ত কৃষকগণ।
বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, নির্ধারিত দূরত্বের বাইরে সংযোগ দেওয়ার কোন সুযোগ নাই। অফিসিয়ালভাবে ১৫০ ফুটের মধ্যে থাকলে আমরা সংযোগ দিতে পারি। এর বেশি হলে পারি না। কেউ একক সুযোগ বা সুবিধা পাচ্ছে না। এখানে দ্বন্ধ নেই, নিয়ম পালন করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার