মৌসুমের শুরুতেই সরকারের মূল্য ঘোষণায় খুশির হলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক। তাই ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন এ জেলার কৃষক।
চলতি বছরে ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ক্রয় করবে সরকার। এর মধ্যে ২৪ টাকা কেজি দরে সাত লাখ মেট্রিক টন ধান, ৩৪ টাকা কেজি দরে সাত লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৩৩ টাকা কেজি দরে এক লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল ও ২৮ টাকা কেজি দরে এক লাখ মেট্রিক টন গম কেনা হবে। এই দাম নির্ধারণ করায় উৎপাদন খরচ উঠবে বলে আশায় বুক বেধেছেন কৃষকরা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রুহিয়া এলাকার কৃষক মিনহাজুল ইসলাম জানান, "সরকার প্রতিবারই ধান-চাল ও গমের মূল্য নির্ধারণ করে যখন কৃষকের ঘরে ফসল থাকে না। কিন্তু কোন দিনও সরকারি মূল্যে কোথাও ধান ও গম দিতে পারি নাই। মাঠ থেকে ফসল কেটেই বাজারে বিক্রি করি। আর যখন সরকারি দাম নির্ধারণ হয় তখন ফসল থাকে না ঘরে। তাই কার্ড বাধ্য হয়েই নেতা ও ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করে দেই।"
কৃষক ইউসুফ আলী জানান, "প্রতিবার সরকার কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও গম ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা করা হয় না। এর ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। আর লাভবান হন মধ্যস্বত্বভোগীরা।"
রায়পুর এলাকার তৈয়বুর রহমান জানান, "বেশ ক’বছর থেকেই কৃষকরা ধানের মূল্য পাচ্ছে না। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধান আবাদ করে লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। সরকার যখন দাম নির্ধারণ করে তখন নেতারাই সব ভাগাভাগি করে নিয়ে নেয়।"
ঠাকুরগাঁও চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু জানান, "সরকারের এ উদ্যোগে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবে। কিন্তু কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় না করলে উৎপাদনের খরচও উঠবে না।"
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাসুদুদুল হক জানান, "সরকার ধান, চাল ও গমের যে মূল্য নিধারণ করেছে। তা যদি সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন হয় কৃষক তার উৎপাদিত মূল্যের নায্য দাম পাবে।"
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রয়ক আশরাফুজ্জামান জানান, "আমরা বরাদ্ধের কাগজ পাওয়ার পর জেলা খাদ্য কমিটির সভায় আলোচনা করেছি। সম্প্রতি আমরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান, গম ও চাল ক্রয় অভিযান শুরু করবো।"
ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য কমটিরি সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, "সরাসরি যেন কৃষকের কাছ থেকে ধান, গম ও চাল ক্রয় করা হয় সে কারণে খাদ্য বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। না হলে সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। শীঘ্রই ক্রয় অভিযানের উদ্বোধন করা হবে।"
বিডি-প্রতিদিন/ ২২ এপ্রিল, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-৯