গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দুইটি জিরাফ মারা গেছে। এ ব্যাপারে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সাফারি পার্কের ‘কোর সাফারি পার্ক’ এলাকাটি দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে কেন ও কিভাবে ওই প্রাণি দুইটি মারা গেছে সে ব্যাপারে পার্ক কর্তৃপক্ষ মুখ খুলছে না।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. শাহাবুদ্দিন জানান, গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ছয় থেকে সাড়ে ছয় বয়সের দু’টি মাদী জিরাফ মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞদের খবর দেয়া হয়। বুধবার দুপুরে ওই চিকিৎসকরা পার্কে পৌঁছানোর আগেই সকালে এরা মারা গেছে। এ ঘটনার পরে ‘কোর সাফারি পার্ক’ বন্ধ রাখা রয়েছে। কোন দর্শনার্থীকে ভেতরে ঢুকার জন্য টিকেট দেয়া হচ্ছেনা।
সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. সামসুল আজম জানান, দাঁড়ানো অবস্থায় হঠাৎ করে পড়ে গিয়ে জিরাফ দুইটি মারা গেছে। আগে থেকেই তাদের রোগের কোন লক্ষন বুঝা যাচ্ছিল না। এখন পার্কে ১০টি জিরাফের মধ্যে ৮টি জিরাফ রয়েছে। তবে রোগটি পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরেনারী মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি ব্যাক্টিরিয়াজনিত কোন রোগ। তবে কোন ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণে জিরাফ মারা গেছে তা তিনি বলেননি। তবে রোগ সংক্রমণ রোধে অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য কোর সাফারি পার্কটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। পার্কের প্রধান ফটকে ‘অনিবার্য কারণবশত পুনরয় আদেশ না দেয়া পর্যন্ত কোর সাফারি পার্ক বন্ধ থাকবে’ কর্তৃপক্ষ বুধবার এমন নেটিশ টানিয়ে দিয়েছেন।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, প্রাণী দুটি আফ্রিকার উষ্ণ অঞ্চলের। বাংলাদেশের পরিবেশর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েই তারা এতদিন বসবাস করে আসছে। চিকিৎসকদের ধারণা কোন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এরা মারা যেতে পারে। বৃষ্টির ফলে মাটি কর্দমাক্ত হয়ে তাকে ব্যাকটেরিয়া জন্মে। তবে কোন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে প্রাণী দুটি মারা গেছে তা এ মূহুর্তে বলা যাচ্ছে না। তিনি জানান, প্রাণী দুটি মারা যাওয়ার কারণ নির্ধারণের তাদের নমুনা ঢাকা, ময়মনসিংহসহ চারটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে। এদিকে মারা যাওয়া জিরাফ দুটিকে পার্কের ভিতরেই মাটি চাপা দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, বেচে থাকা ৮টি জিরাফ নিয়ে পার্ক কর্তৃপক্ষ খুব চিন্তিত। তাদের কোথায় কি ভাবে রাখা হবে তা নিয়ে বিশেজ্ঞ চিকেৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করা হচ্ছে। কোর সাফারী বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে বলেন, কিছু দিন আগে একটি ভল্লুক তার এলাকা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল। পরে তাকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া দুটি জিরাফ মারা যাওয়ায় সাময়িক ভাবে কোর সাফারী পার্কটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ভাল্লুকের থাকার জায়গাটি সংস্কার করার পর খুব দ্রুতই কোর সাফারীটি সর্ব সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে।
পার্কের চিকিৎসক মো. নিজাম উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রাসহ একটি সূত্র জানায়, ওই জিরাফ দুইটির মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে অফ্রিকা থেকে ১০টি জিরাফ কেনা হয়েছিল।